ছবি: সুনন্দ |
বাঙ্গালী স্বভাবকবি, কিছুই না ক’রে
শুধু বসে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়ে দিতে তাদের জুড়ি নেই। আর অতীত-বিলাসিতা ?
সে তো তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। না না... আমি সমালোচনা করছি না। সে
ধৃষ্টতা আমার নেই। কারণ after all আমিও তো বাঙালী, এবং ভাল বা খারাপ যাই বলুন এই সবকটি গুণই আমার মধ্যে প্রবল ভাবেই বর্তমান।
বিশেষতঃ স্মৃতিচারণ এবং অতীতমগ্নতা আমার নিষ্কর্মা জীবনের অন্যতম দুই ধারক। এ যেন
এক অনন্ত সময়সমুদ্রে জলকেলি...একবার ডুবে যাও, তারপর ভেসে
ভেসে উপভোগ কর...পারলে নিজের মতো আরো দু-তিন জন
এই যেমন আজ দুপুরেই সপ্তাহের বেশীরভাগ দিনগুলোর মতই
কোন কাজ ছিল না। কি করি, কি করি ভাবতে ভাবতে আচমকা দু-তিন জন বন্ধু (অবশ্য আমার চেয়ে junior)
পেয়ে গেলাম। এরা বছরখানেক হল আমাদের সাথেই কাজ করেছে,
project শেষ করে PhD-র বিপদসঙ্কুল পথে পাড়ি
দিতে চলেছে। সে যাহোক...বাজে বকা শুরু হোলো এবং যথারীতি জগদীশ বোস to ঋতুপর্ণ ঘোষ...cinema থেকে জীবনবীমা...geography
পেরিয়ে pornography ছুঁয়ে সেই আলোচনা
স্মৃতিচারণার নদীতে গিয়ে মিশল। সেই স্কুলের বাঁদরামি, কলেজের
ছ্যাবলামি...সেই এক গল্প, সুযোগ পেলেই যা বারবার বলি,
কখনো ক্লান্ত মনে হয়না, একঘেয়ে
লাগেনা...চোখদুটো চকচক করে ওঠে বারবার, মনে হয় এই তো সেদিনের
কথা। বেড়ে যাওয়া বয়স, পেরিয়ে যাওয়া সময়কে যেন আঁকড়ে ধরে
রাখার এক আপ্রাণ চেষ্টা। সব শেষে হঠাৎ
হুড়মুড় করে বর্তমানে ফেরত এবং নিষ্ফল হতাশোক্তি, “শ্-শালা...বয়সটা
অনেক বেড়ে গেছে”। ও হ্যাঁ এই সবের মাঝে ঘণ্টা দুয়েক সময়
সাবড়ে দেওয়া গেছে।
চা-পান করে ফিরে এসে দেখি ওরা বেরোচ্ছে। আমায় বল্লো, “এলাম অরুণাভদা...আর তো দেখা হবে
না...ভালো থেকো”...অতঃপর প্রথাগত টাটা-বাই এবং তাদের
প্রস্থান। কিছুক্ষণের স্তব্ধতা। হুমায়ুন আহমেদের কোনো দুঃখের উপন্যাস শেষ হলে যেমন
হয় অনেকটা সেরকম অনুভূতি। এই একটি বছর এরা আমাদের সাথেই কাজ করেছিল। নিজেদের কিছু
আনন্দ-অতৃপ্তি-ভালোলাগা-হতাশা আমাদের সাথে ভাগ করে নিয়েছিল। সব মিলিয়ে গত কয়েক মাস
ওরা যেন এই জীবনের অংশ হয়ে উঠেছিল। আজ যে যার মতো বেরিয়ে পড়ল নিজের নিজের ‘স্বপ্নপূরণের’ লক্ষ্যে। ওদের চলে যাওয়ার পর ফাঁকা
ঘরে গিয়ে মনটা ভারি হয়ে গেল। পুজোর পর বাড়ি থেকে ফিরতে যেমন কষ্ট হয়, অনেকটা সেই রকম। মনে হল আরো একটা সমাপ্তি...এই এতদিন যারা আমার জীবনে ‘বর্তমান’ ছিল, আজ থেকে তারাই ‘অতীত’। মনটা হঠাৎ উদাস হয়ে গেল। তারপরেই ভেবে
দেখলাম...আসলে এই সমাপ্তি গুলোই আমার প্রাপ্তি। বরাবরের মতো আজ আবার
অতীত-রোমন্থনের একটা নতুন উপাদান পেয়ে গেলাম। আমার বেঁচে থাকার নতুন রসদ। আসলে তো
আমি সেই বাঙ্গালী।