ছবি: সুনন্দ |
তা,
বছর দশেক হবে মন দিয়ে ফিলিম দেখছি। সে অনেক ফিলিম, নিজেরই ভাল মনে নেই অনেক।ও সর্বনাশা নেশায় অনেক কিছুই পোড়ায়। যা এত বছর,
এত প্রযুক্তি, এত টাকা ধ্বংস করার পরেও ভাল
করে বুঝিনি, তা হল সিনেমার দর্শককে। অথচ, যে যাই বলুক, এক ছাড়া আর অপূর্ণ। “আপনি সিনেমা দেখেন কেন?” ভাল লাগে বলে। “লোকে সিনেমা বানায় কেন?” ভাল বানালে ভাল তো লাগেই,
আর সেটা লোকের ভাল লাগলে আরও ভাল। কোনটা ভাল, আর
কোনটা নয়, এই প্রায় ব্রহ্মাণ্ড-
বয়সী প্রশ্নের উত্তরও একই ধরনের আর গড়নের নেবুলায়
ঢাকা। কলেজ স্ট্রীট আঁতেলের আগমার্কা উত্তর- “পাব্লিকের যা ভাল লাগে, তা খারাপ;
যা দেড়েলের ভাল লাগে, তাই ভাল।” ইদ এস্ত, পাব্লিক আর দেড়েল এক দোকানে চা খায়না। এবার
আরও মজা, পাব্লিক থেকে একটি মাল কে বের করে কোনঠাসা করুন,
ব্যস, হয় তার খোঁচা খোঁচা দাড়ি গজাবে, নয়তো দেখবেন Gillette এর ওপর রাগ করে মাটিতে ভাত
খায়। বলুন, আপনার কি করণীয়? আপনি হয়
দিনে দেড়েলের সঙ্গে ঘুরবেন আর রাতে বউকে নিয়ে স্ল্যাপ্স্টিক দেখবেন (ও হ্যাঁ,
বউরা in general কোন গোত্রেই পড়েনা, তবে সে আর এক দিনের কথা), নয়তো কিম-কি-দুক শুনে বুক
চিতিয়ে বিষম খাবেন। এ ছাড়া কোন অন্য রাস্তা নিলে আসুন, আমার
ফেসবুক ফ্রেন্ড হয়ে যান। আমার রাস্তা অতি দুঃখের, সে কথায়
পরে আসছি।
হ্যাঁ, যা বলছিলাম, দেড়েলের যা ভাল লাগে।
দেড়েল মাত্রই ক্ষতিকারক ভাবার কোন কারণ নেই। তারা, চন্দ্রিলের
(আর এক দাড়িবাজ) কথায়, বেজায় ভীতু প্রাণী। এরা দু’প্রকার- (অন্য সব কিছুর মতোই) উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট শ্রেণীর। এদের মধ্যে কিছু
লোক সত্যিই ভয়ানক বেশীরকম আর অনেক উঁচু আর খোলা মন নিয়ে সিনেমা দেখে (ভাল কথা,
contrary to general notion, সাউথ সিটির টপ ফ্লোরে থাকলেই মন ওইরকম
হয়ে যায়না)। তাদের জন্য আমাদের নতুন মুখ্যমন্ত্রী অভয়ারণ্য খুলে দেবেন বলছেন। আরেক
দল, ওই লোকগুলোকে কাঁচা ফলো করে, ফেউএর
মতো। এদের উচ্চকিত ঘোষণায় আপনার মনে হতেই পারে যে আপনি ' Fanny andAlexander ' এর বদলে ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’
এর প্রশংসা করে রাজদ্রোহ করেছেন। তাতে রেগে গিয়ে আপনি যদি শপথ করেন
যে আর যাই হোক, ইওরোপিয়ান কোন পরিচালকের সিনেমা মরে গেলেও
দেখছেননা, তবে আপনার দোষ নেই, আর শুনে
আশ্বস্ত হবেন, আপনার মতো মানুষই সংখ্যায় বেশী। সেই জন্যেই
তাদের ‘পাব্লিক’ বলে।
তা,
দেড়েল, সে ছদ্ম হোক বা সত্যি, ওই যে বললাম, ক্ষতিকারক নয়। নেহাত খুব জ্বালালে মন
দিয়ে অবহেলা করবেন। ভয় যদি কাউকে পেতেই হয়- ওই ‘পাব্লিক’। বুদ্ধি, আপনি অবাক হলেও, এর
অনেক বেশী। অন্ততঃ, দুনিয়াদারিতে যা লাগে। ক্ষমতা নিয়ে
কোলকাতা টু কোলাভা কারুর কোন সন্দেহ নেই। যা গোলমাল সব ওই বোধের প্রশ্নে। ‘BhejaFry’ দেখেছেন? এক নির্বোধের ওই গল্পে যদি আরও
কয়েকশো কে এনে ফেলেন, যারা একে অন্যকে সমর্থন করছে, কোরাসে কথা বলছে, নিজেদের সব অসঙ্গতিকে প্রতিভা বলে
চালাতে চাইছে- তখন তিতিবিরক্ত আপনি চাইলেও পারবেন কি ওই বাহিনীকে এক কথায় ভুল বলে
চালিয়ে দিতে? অমোঘ প্রশ্ন জাগবেনা- আপনি নিজেই ভুল নন তো?
ইতিহাসের শরণ নিতে গিয়ে দেখবেন যতজন radical এসেছেন,
প্রকৃত পাগলের সংখ্যা তার থেকে অনেক গুণ বেশী আর কোন পক্ষেরই
জীবদ্দশায় সঠিক বিচার অসম্ভব। আপনি কি? পাগল না ক্ষণজন্মা?
কান কেটে ফেল্লেও উত্তর পাবেননা (বন্ধুরা ভ্যান গগ বলে খ্যাপাতে
পারে- এই পর্যন্ত)।
ইদানিং অবশ্যি ইন্টারনেটের দৌলতে এই অন্তর্দ্বন্দ্বের
হাত থেকে সহজেই মুক্তি সম্ভব। আপনার মত যাই হোক না কেন, সহমত পোষণকারী একটি-দুটি পাবেনই(জয়
রামকৃষ্ণ!)। তাতে খুব সাহস বেড়ে গিয়ে থাকলে ব্লগ লিখতে পারেন (এই যেমন লিখছি),
যদিও তাতে আপনার আহত আত্মসম্মান পুনরুদ্ধারের সুযোগ কম।
তা সে যাকগে, আদতে যা বলছিলাম, এই দেড়েল-পাব্লিক
দোফলায় পর্যুদস্ত হয়ে যদি তৃতীয় কোন পন্থা অবলম্বন করতে চান, তবে আসুন আমার দলে। কেমন সেই সুইৎজারল্যান্ড জীবন? পরে
আরেকদিন বলব ‘খন।
পুনশ্চঃ আমার এক বান্ধবী এই লেখার খসড়া দেখে ‘public’ শব্দে মৃদু আপত্তি তুলে বললো
যে এতে নাকি আমাদের দেশের ৮০% লোকের কথাই বলা হয়নি, যারা
পেশীবহুল নায়কের অপ্রতুল মগজের লঙ্কাকাণ্ড দেখে ভুলে থাকে- জীবনের গ্লানি, অপ্রাপ্তি, যন্ত্রণা- এককথায় যাকে বলে বাস্তব। তারাই
পাব্লিকের প্রধান অংশ। কথাটা ঠিক। কিন্তু এটাও ঠিক, এই দলটা (অন্ততঃ এই দেশে) ‘বই’ দ্যাখে, সমালোচনা করার বা ভাবার জন্য নয়। বাড়ির ছোটদের মানসিক পরিণতির পথে ‘বই’ তাদের মতে বাধা। এদের মতামত তারকা বানায়,
শিল্পী নয়। “পাব্লিক? সে
তো মাইনরিটি!”** অলীক, রূপকথাধর্মী
গল্পের অবাস্তব চরিত্রদের ঢাক পিটিয়ে প্রেম করা দেখে আপন আখরোটসম বৈবাহিক সম্পর্ক
ভুলে থাকা, বউকে ঘরে রেখে ‘মুন্নি’র সহাস্য বদনাম আচার করে খাওয়া এই গোষ্ঠীকে যদি চিন্তায় রাখতে হয়, তবে আর হুসেনকে দেশে ফেরানোর পক্ষে কথা বলব কোন মুখে?