ছবি: সুনন্দ |
কাল রাতে বহুদিন পর একটা ethical dilemma র সামনে পড়লাম।দিব্যি
খাওয়া-দাওয়া সেরে একটা সিনেমা দেখতে বসেছি, এমন সময় আমাদের
কমপ্লেক্সের সামনের বাড়ি থেকে চিল-চীৎকার ভেসে এল। মহিলা কন্ঠ, ভাষাহীন। চমকে গিয়ে কান পাতলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার। উঠে গিয়ে জানলায়
দাঁড়াতে অস্ফুটে শোনা গেল ‘দোহাই তোমার’ গোছের কিছু কথা। দুটো বাড়ির মাঝে বেশ বড় ফাঁকা জায়গা, সেখানে দু-তিনটে গাড়ি, আর একটা কদম গাছ, তারপর ও অনেকটা জায়গা। এতটা ছাপিয়ে ঘনঘন চীৎকার যখন শোনা যাচ্ছে, তখন ভালই গোলমাল বেঁধেছে নিশ্চয়ই। জানলায়
ইতিমধ্যে বেশ কিছু থালা-বাটির আওয়াজ এসেছে কানে। আবার
একটা আর্তনাদ। আমার কি কিছু করা উচিত? আর কেউ তো বেরোয়নি নিজেদের ঘর থেকে। কিছু বললে সেটা সাহস
হবে না ধৃষ্টতা? এরকম কি মাঝে-মধ্যেই হয়, কিন্তু গত দেড় বছরে তো কখনো শুনিনি? শুনিনি কি?
ওই বাড়িতেই সেই একবার দুপুরবেলা পুলিশ এসেছিল না? সেই যে, রোমিও নামের কুকুরটা খুব ডাকছিলও--
নিজের ভাসমান মনকে টেনে আনলাম। বাড়িতে পুলিশ আসলেই
কেউ দাগি আসামি হয়না বা “ওদের ওরকম হয়” ভাবার স্বাধীনতা আসেনা। আমি না
শিক্ষিত? “I shouldn’t judge too quickly.” সেতো ঠিক আছে,
কিন্তু এখনো আমার আর ওই বাড়ির মাঝে বিরাট ফাঁক। আজ যদি বাধা দিতে
গিয়ে ওই বউটাই বলে এটা ওদের নিজেদের ব্যাপার, তবে কাল থেকে
তো ঘর ছেড়ে বেরনো যাবেনা। আর কিছু না করলে যদি কাল একটা ডেড-বডি বেরোয় ওই ঘর থেকে?
নাঃ,
নাইট-গার্ডটা আমার মতই ভাবে। এগিয়ে গেল বাড়িটার দিকে। প্রায় একই
সময়ে ওই ফ্ল্যাটের ওপর-নীচের ফ্ল্যাটে আলো জ্বলে উঠলো। নীচতলা থেকে একজন বয়স্ক
জোরে গলা খাঁকারি দিলেন। আওয়াজ আরো বার-দুয়েক হয়ে বন্ধ হল। আমি আরো মিনিট পাঁচেক
দাঁড়িয়ে থেকে ঘরে ঢুকলাম। কল্পনায় দেখতে পেলাম, আশপাশের সব
বাড়িতে দম্পতিরা একে অন্যকে সাহস জোগাচ্ছে, নিশ্চুপে,
যে, ‘আমাদের কখনো এরকম হবেনা’। ওটা একটা খুব প্রয়োজনীয় ভাঁওতা। ভাল ব্যাপার বলছিনা, কিন্তু ধর্ম-বিশ্বাসের থেকে তো কম! সে যাগ্গে, আমার
শুধু চিন্তা হ’ল, প্রয়োজন পড়লে আমি কি
যেতে পারবো কখনো ‘বেল বাজাতে’? যদি যাই,কে ঠিক করে দেবে তার সঠিক সময়?