তারকের
দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি, খপ করে চেপে ধরলো খেজুর। ‘দাদা, দোল মানে কি?’ সকাল
সকাল মেজাজ এমনিই সপ্তমে চড়ে থাকে, তায় এই ধরনের
গোলমেলে প্রশ্ন শুনলে বিষ্ণুও নড়ে চড়ে বসবেন। কিন্তু খেজুরের মুখ দেখে বুঝলাম, দরকারটা জেনুইন। এখন দেখুন, কিছু লোক আছে, যারা লেখাপড়া করে, ভাবনা-চিন্তা করে, প্রশ্ন করলে চারটের বদলে দশটা কথা বলে দেয়। তাদের বুদ্ধিজীবী বলে। আমি তো আর বুদ্ধিজীবী নই- এ সব প্রশ্নের উত্তর জানলেও বলার মতো আত্মবিশ্বাস নেই। কিন্তু খেজুরের কাছে আমিই উইকিপিডিয়া। তাই বললাম- ‘দোল মানে হলো দোলা। দোদুল্যমান অবস্থায় থাকা। দোলনায় বসে যা খাওয়া যায়, তাকে দোল বলে।’ উত্তর শুনে খেজুর আরও ভেবলে গেলো। ‘সে তো জানি দাদা, তবে কথাটা সেটা নয়- আমি জিগাচ্ছি এই দোল উৎসব মানে কি?’
গোলমেলে প্রশ্ন শুনলে বিষ্ণুও নড়ে চড়ে বসবেন। কিন্তু খেজুরের মুখ দেখে বুঝলাম, দরকারটা জেনুইন। এখন দেখুন, কিছু লোক আছে, যারা লেখাপড়া করে, ভাবনা-চিন্তা করে, প্রশ্ন করলে চারটের বদলে দশটা কথা বলে দেয়। তাদের বুদ্ধিজীবী বলে। আমি তো আর বুদ্ধিজীবী নই- এ সব প্রশ্নের উত্তর জানলেও বলার মতো আত্মবিশ্বাস নেই। কিন্তু খেজুরের কাছে আমিই উইকিপিডিয়া। তাই বললাম- ‘দোল মানে হলো দোলা। দোদুল্যমান অবস্থায় থাকা। দোলনায় বসে যা খাওয়া যায়, তাকে দোল বলে।’ উত্তর শুনে খেজুর আরও ভেবলে গেলো। ‘সে তো জানি দাদা, তবে কথাটা সেটা নয়- আমি জিগাচ্ছি এই দোল উৎসব মানে কি?’
এবার আমার
ভেবলে যাওয়ার পালা। এ তো কঠিন প্রশ্ন। ওই যে ছোট বেলায় শুনেছিলাম- ‘কেষ্টা ব্যাটাই
চোর...’। তা সেই কেষ্টাই কি সব করেছিলো ওই দিন শুনেছি। মেয়ে-টেয়ে দের রং-টং দিয়েছিলো
বোধহয়। কিন্তু সেটাকে দোল বললো কে? দাড়িদাদু নাকি? শান্তিনিকেতনে শুনেছি ওই সময়
মেয়েরা রং চড়িয়ে নাচানাচি করে। সে সব দেখতে শহর থেকে অনেকে যায়ও। কেন বললো দোল?
দাড়ি চুলকে কিছুক্ষণ ভাবার ভান করলাম। কিন্তু কিছুই বুঝলাম না। অগতির গতি দাড়ি
ঠাকুর। তিনি কি বলেছেন? কবতে আর রচনা তো পড়িনি- কিন্তু দোল নিয়ে গান আছে না? ‘ওরে
গৃহবাসী... খোল দ্বার খোল- লাগলো যে দোল...’ । মনে হয় খোলের সঙ্গে মিল দিতে দোল
বলে দিয়েছিলো। এটা তো আর খেজুরকে বলা যায় না, তাই বললাম,- “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই
রঙের উৎসব কে দোল বলেছিলেন।” একদম শান্তিকামী উত্তর। ভুল নয়, কিন্তু কিছুই জানা
গেলো না। অনেকটা বোম ফাটলে প্রধানমন্ত্রী যেমন বলেন আর কি। খেজুরের কৌতূহল তখনো
কমেনি। তাই আর একটু ভাবার চেষ্টা করলাম। ‘রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোকে পলাশে- রাঙা
নেশা মেঘে মেশা প্রভাত আকাশে’ এ কি রে? এতো সিপিএমের থিম সং মনে হচ্ছে! ওরা দোল
খেলবে কি, আসনটাই তো দুলে গেছে... যাকগে, রঙের কথাটা আছে। আরও দেখা যাক- ‘রঙিন
পাতায় লাগে রাঙা হিল্লোল- ’ পেয়ে গেছি! বসন্ত! কে না জানে দাদুর ওই বসন্তে দোলনায়
দোল খেতে ভালো লাগতো... প্রমাণ? ‘দোলা লাগিল দখিনায় বনে বনে..., সেদিন দুজনে
দুলেছিনু বনে..., ইত্যাদি’ (পরের কথাগুলো মনে না পড়লেই লোকে ‘ইত্যাদি’ লাগায়
শুনেছি। আমিও লাগালুম।) তাহলে বোঝা গেলো, বসন্তে হৃদয়ে, প্রকৃতিতে দোলা লাগে বলে
তার উৎসবকে বলে দোল। কিন্তু কথাটা খেজুরকে জানাতে খচ্চর বলে কি, ‘সে না হয় হলো,
কিন্তু ওই ‘রাঙা’, ‘রাঙা’ করে আদিখ্যেতা কেন বলতো?’ আজ কি হয়েছে ব্যাটার কে জানে?
একের পর এক জটিল প্রশ্ন করেই চলেছে... আমিও তেমনই বাজে বকে দিলুম খানিক। ‘আরে, ওটা
তো হবেই। দেখিস না, এটা তো বিয়ের মরসুম। লোকে ঝপাঝপ বিয়ে করে। আর বিয়ে মানেই
সিঁদুর- রাঙা... কি রে বুঝলি না? আবার ওই ছড়াটা মনে কর- ‘দোল দোল দুলুনি, ‘রাঙা’
মাথায় চিরুনি, বর আসবে এখুনি, নিয়ে যাবে তক্ষুনি... ‘ইত্যাদি’...দেখলি তো?’ খেজুর
এতক্ষণে হ্যাঁ বাচক হাসলো আর মাথা দোলাতে দোলাতে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো।