courtesy: link |
ভাগ্যবানেরা হয়, নিজেকে, নিজের আত্মীয়স্বজন, বাড়িঘর, ঝোপের কোণ - সবকিছুর মুখে থুতু ফেলে দিয়ে উদ্দেশ্যহীন হয়ে যাওয়া সক্কলের কম্মো নয় বাপু। যাকগে যেটা বলছিলাম, আপনি, থুড়ি আমি স্বার্থপর কিনা। হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনার সরব অসম্মতি আমি শুনতে পেয়েছি। পাহাড়প্রমাণ যুক্তি আর সাক্ষ্য নিয়ে ধেয়ে আসার কোন দরকার নেই।
আমি জানি ছোট্টবেলার সেই নাক
আর চোখ থেকে জল ঝরা তখনও থামেনি, সেদিন
থেকেই পেন্সিল, টিফিন, রঙের টুকরো
সবই ভাগ করেছেন আপনি- বন্ধু/potential বন্ধু’র সাথে। স্কুলভ্যানে ধারের সিটটা
ছেড়ে দিয়েছেন। পূজোর সময় বেশী ঝিনচ্যাক জামাটা ভাই কে দিয়ে দিতে হয়েছে কতবার। টিভি
তে দ্রাবিড় এর সেঞ্চুরি’র
বদলে নীরবে তুলসী ইরানি’র
চোখের জল সহ্য করেছেন। এরপর চুমু-চুমুক, তাও ভাগ করেছেন হাসিমুখে (প্রেমিকা’র নয়, চা-নিকোটিনের
কথা বলছিলুম...)। আরো ভাগ করবেন জানি, বাপের বাড়ি, মায়ের শাড়ী, এমনকী বংশের
হক্কের মাল বলে ফুটো পেতলের হাঁড়ি- সবেরই ভাগ নেবেন ও দেবেন sure। “ডেঁপো ছোকরা
কোথাকার, এতই
যখন বোঝো, তাহলে
আমাকে স্বার্থপর বলছ কোন আস্পদ্দায় হে?”
দাঁড়ান হুজুর, এই লম্বা
লিস্টিটা আপনার উদারতার নয়,
এক পলকের এট্টু ছোঁয়া টা আপনার আদি ও অ-কৄত্রিম হলোগ্রাম দেওয়া স্বার্থের-ই।
বোঝা গেল না তো? সত্যি
তো, ওই
যে দাড়িদাদু বললেন না –
“সহজ কথা যায় না বোঝা সহজে...” (অবিকল এমন’টা বলেননি বলছেন? চাপ নেই, কপিরাইট এর
দিন শেষ)। আচ্ছা, একটু
কঠিন ভাষায় যাই তাহলে,
সাধ আর সাধ্যের মধ্যে ফারাকটা ভগা’র বানানো, তার আর কি? চাল-কলা
থেকে শুরু করে ভূনি-খিচুড়ী অবধি ফাউ পাচ্ছে তো সব-ই, কাজেই মানুষ এর মত সুলভ গিনিপিগ তার
আর জানা নেই। এই যেমন ইস্কুল যাওয়ার সময় আপনার বেঞ্চির ধারে বসবার সাধ আছে, কিন্তু
হুমদো সহপাঠী’র
সাথে এঁটে উঠবার সাধ্য নেই,
কাজেই রাখাল অতি সুবোধ বালক। নিজের টিফিন বেশ সোনামুখ করে ভাগ দিলেন প্রবীরকে, কারণ
দ্বিবিধ- হয় সে কেড়ে খাবে,
নয়তো তার টিফিনটিও বেশ লোভনীয় (শুঁকে দেখুন টিফিন নয়, স্বার্থের
গন্ধ পাবেন)। ভাই এর ভালো-তর পূজোর জামা দেখে একদিনও কি আর চোখের জল ফেলেন নি? স্বার্থে ঘা
লেগেছে বই তো নয়। টিভি’র
ভাগ পাওয়া নিয়ে দিদি’র
কাছে হার মেনেছেন, মা-বাপ
মেনেছে বলে (তারাই তো ওকেও এনেছে, আপনার-ই মতো, আপনার আগেই)। চুপচাপ ভেবে নিয়েছেন, দাঁড়া
শালারা, একবার
ইনকাম করি, দেখব
সবক’টা
কে- আপনি নন, আপনার
আহত স্বার্থের হুঙ্কার। অফিসে গিয়ে ফাইল ছুঁয়েও না দেখে তেল মারা সহকর্মী কে
খিস্তি দিলেন মন ভরে,
আহা, সেই
ইস্কুল বেলার মতো আনন্দ আবার পাওয়া গেলো। না, আপনি নিজের আত্মসম্মান বাঁচিয়ে কাজ
করেন আর কু-লোকএ তেল মেরে ক্ষীর খাচ্ছে অতএব আপনি তাকে গাল পাড়ছেন-ব্যাপারটা এমন নয়। কোন কারণে আপনার সেই সুযোগ আসেনি আর
আপনার আগেই সে কাজ সেরেছে- এইটে আপনার সইছে না। মানে স্বার্থে সইছে না আর কি।
লেকের ধারে চকাস চকাস শব্দে উৎস(দের) বাপ-মা উদ্ধার করলেন, সংস্কার বলে
আর কিছু রইলো না দেশে। আমার ধড়ে একটিই মাথা, নয়তো বলতাম যে ইউনিভার্সিটি তে পড়তে
গিয়ে সে (সু)যোগ আপনার ঘটে নি, মানে স্বার্থসিদ্ধি হয় নি ঠিকঠাক, তার জন্যেই
এই উথলে ওঠা সংস্কার-পিরিতি, নয়তো সব জেনে শুনে আবার পরদিন ওই লেকের ধারেই কেন হাঁটতে
যাওয়া বাপু? আমার
মেয়ে-বউ কখনোই “যথেষ্ট” ভদ্র পোষাক
না পরে বাইরে বেরুবে না-এই রইলো আমার হুকুম, যতটা না তাদের জন্য চিন্তা, তার চেয়ে
আনেক বেশী আছি আমি,
“আমার” মেয়ে, “আমার” বউ। মানে
লোকে “আমাকে” বলবে কি। কি
আবার বলবে? ঠিক
আমি যা বলেছি (এবং যে ভাষায় বলেছি) ওই রকম স্বল্পবসনা পরস্ত্রীদের দেখে। ইতিহাস
ঠোঁটকাটা, জানিয়ে
দিচ্ছে – বরাহমিহির
নাকি ব্যাটার বউটার জিভ কেটে নিলেন (গল্পই হয়তো, কিন্তু গল্প সমাজের ভিতেই গড়ে উঠেছে
গো আজ অবধি), স্বার্থে
ঘা লেগে, মানে
সে বেটি নাকি গণণা করছিলো শ্বশুরের চেয়েও ভালো। ভবিষ্যৎ, সেও
ঠোঁটকাটা (ইতিহাসেরই প্র-প্র-প্রপৌত্র কিনা!), হয়তো একদিন জানাবে সহকর্মী’র
কম্পিউটারে ভাইরাস ইন্সটল করলেন সফো-জীবী।
ছবির উৎস: লিঙ্ক |
এই যে বাক্যবাগীশ, তাহলে
স্বার্থপর হওয়া ছাড়া আর কি করার আছে বলতে পারো? অবশ্যই স্বার্থ নশ্বর মানুষমাত্রেরই
ধর্ম, ও
নিয়ে লজ্জার কিছু নেই। আমার খিদে পেয়েছে, আমি খাবো-এই সহজ কথাটা না বলে “আজ্ঞে, আর কেউ
খাওয়ার ছিলো না বলে বাধ্য হয়ে আমায় খেতে হলো” এই মিথ্যে বিনয় (আচ্ছা, এও কি
মানুষমাত্রেরই ধর্ম?)
আর কতদিন চলবে গুরু?
খাবার দেখে লোভ হল,
চেয়ে খাবো, রোজগার
করে খাব, না
পেলে কেড়ে খাবো- সেই শুরুর পাগলটা’র মতো। অবশ্য তাকেও রেহাই দেয় নি
কেউ। প্রবাদ বলছে “নিজের
ভালো (নাকি) পাগলেও বোঝে”।