Saturday, August 27, 2011

সততই সুখের...-- রাখী


আমার cabin এর পাশের জানলা থেকে school এর খেলার মাঠটা পরিষ্কার দেখা যায়। সবসময় নজর যায়না। তবে যখন
ওই project, Presentation, Reporting এর মাঝে একটু সময় পাই আর google,  orkut, facebook  chatting  করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি তখন চোখটা একটু আরামের খোঁজে জানলার বাইরে চলে যায় আর দেখে বাচ্চাগুলো
আপন মনে খেলে যাচ্ছে, ছোটাছুটি করছে, মারামারি করছে, টিফিনবাক্স share করছে। একে অপরের ঘাড়ে উঠে পড়ছে, কোথাও দুজন বসে কি সব গল্প করছে, কোথাও বা একে অপরকে রাগাচ্ছে আর রেগে গেলে জড়িয়ে ধরে রাগ ভাঙাচ্ছে .... আরও কতো কিছু করে যাচ্ছে ওরা। মনে পড়ে যায় আমার ছোটবেলার কথা।

আমিও তো এরকমই ছিলাম স্কুলে। ছয়জন বন্ধু ছিলাম আমরা। সবসময় একসাথে থাকতাম। ক্লাসরুম, খেলার মাঠ আর এই বন্ধুদের নিয়ে একটা বিশাল জগৎ ছিল আমার। কত কি দুষ্টুমি করতাম। প্রচণ্ড রোদে খেলা, বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফেরা, টিফিনে ফুচকা খাওয়া, ক্লাসে ফিসফিস করা, দিদিমণি কিছু বললে ব্যঙ্গ করা, কান ধরে বার করে দিলেও মুচকি মুচকি হাসা ... আরো কত্ত কি। ফার্স্টবেঞ্চ ছিল আমাদের বাঁধাধরা জায়গা। পাঁচজনের সিটে আমরা ছ'জন চাপাচাপি করে বসতাম। আমাদের দেখলেই দিদিমণিরা বলতেন ষড়রিপু। এখন আমার মনে হয় নামটা ষড়-যন্ত্রহলেও খুব খারাপ হতনা। মনে পড়ে, আমি যখন ক্লাস ইলেভেন এ পড়তাম তখন একজন ইংলিশ এর দিদিমণি ছিলেন, নাম "শিবরঞ্জনী", আমরা বন্ধুরা বড় আহ্লাদ করে ডাকতাম "শিবা"। ভীষণ রাগী ছিলেন, পড়া না বলতে পারলে খুব চড় মারতেন। তবে ওঁর একটা অভ্যেস আয়ত্ত করে ফেলেছিলাম, পড়া জিজ্ঞেস করলে শুধু মুখ খুলতে হবে আর দুএকটা relevent  word   বলতে হবে, ব্যস.... উত্তরটা উনিই বলে দেবেন। আমরা শুধু শুনতাম। তবে চুপ করে দাড়িয়ে থাকলেই মাথা গরম হয়ে যেত ওঁর। ক্লাসে আমাকে প্রতিদিন দাঁড় করাতেন আর আমি এমন একটা ভান করতাম যেন ব্যাপারটা কি জানি, শুধু ভাষায় বোঝাতে পারছিনা। দু-তিন বার অ্যাঁ-উ/অ্যাঁ-উ আর সঙ্গে সঙ্গে উত্তরটা উনি বলতেন আর আমি বলতাম- হ্যাঁ দিদিমণি, আমি এটাই বলতে চেয়েছি। আমার বন্ধুরা আমাকে তাই খ্যাপাত, বলত "শিবা তো তোর best friend”সেদিন হঠাৎ ওনার কথা মনে পড়ে গেল- কেমন আছেন উনি এখন, কে জানে? Physics র সবিতা দিদিমণি ছিলেন খুব স্মার্ট আর খুব ইংলিশ এ কথা বলতেন। হাঁ করে শুনতাম। উনি বলতেন "কাল তোমরা এই পড়াটা শিখে আসবে"। আমরা ইয়ার্কি মারতাম- শিখে আসবনা, চেষ্টা করলে পড়ে আসতে পারি। ইশ্‌... ওঁর সাথে খুব খারাপ করেছিলাম একবার আমরা। আমাদের ক্লাস এর Blackboard-টা একটা ডেস্ক এর ওপরে হেলান দিয়ে দাঁড় করানো থাকত। একদিন আমরা বোর্ডটা ডেস্কের একদম ধারে রেখে দিয়েছিলাম, যাতে চক দিয়ে touch করলেই ওটা পড়ে যায়। আর Newton’s law পড়াতে গিয়ে যথারীতি তাই হয়েছিল। কি হেসেছিল গোটা ক্লাস!



আমার প্রিয় বান্ধবী ছিল শ্রীমা , সব দুষ্টু বুদ্ধির উদ্ভব হত ওর মাথায় অথচ মুখটা এমন করে থাকত যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানেনা। একই রিক্সায় chemistry দিদিমণির সাথে গল্প করতে করতে আসত আর সেই কেমিস্ট্রি প্রাক্টিকাল ক্লাসটাই bunk  করত। তার সাথে সাথে আমরাও। স্কুল এর শেষ দিন মনে আছে ও কেমিস্ট্রি lab  এর পাঁচটা বিকার ভেঙেছিল- "বড্ড জ্বালিয়েছে দিদিমণিরা" বলে ...আচ্ছা সত্যি সত্যি কে জ্বালিয়েছে? ওঁরা আমাদের নাকি আমরা ওঁদের ? একবার মনে আছে ক্লাস নাইন-এ বাড়ি ফেরার সময় খুব বৃষ্টি হচ্ছে, রাস্তায় খুব কাদা, হঠাৎ কি মনে হলো কাদা ঘাঁটব, দুজন কাদায় লাফালাফি করা শুরু করলাম। রাস্তা দিয়ে এক দাদু যাচ্ছিলেন, ওঁর ধুতিতে কাদা ছিটিয়ে পড়ল, দাদু কিছু বলার আগেই আমরা দুজনে বলেছিলাম "Surf Excel Hai Na "..., দিয়ে বেদম ছুট আর দমফাটা হাসি।
আমাদের একজন বাংলা দিদিমণি ক্লাসে ঘুমতেন। একদিন ঠিক করেছিলাম যে আজ ওঁর ঘুম ভাঙাবই ভাঙাব। যথারীতি ক্লাসে আমাদের লিখতে দিয়ে ঘুমিয়েছেন। তার ঠিক একটু পরেই হঠাৎ কিছু শব্দ শুরু হল ক্লাসে। "ঠক ঠাক”...কি যেন পড়ছে পরপর। ওটা ছিল আমাদের পেন্সিল boxগোটা ক্লাস জুড়ে শব্দ হতে থাকলো। ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে কি রেগে গেছিলেন.....বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন "কে করেছে এটা?" কেউ কি আর বলে? এখন মনে হয় ওনাকে কি এখনো কেউ আমাদের মতো ঘুম ভাঙ্গায়? কেমন আছে আমার সেই school? বা আমাদের দিদিমণিরা? মাঝে মাঝে মনে হয় paper এ স্বীকারোক্তি দিই আর ক্ষমা চেয়ে নিই। কিন্তু আবার ভাবি, তারা কি ক্ষমা করবেন আমাদের এই ছেলেমানুষিগুলোকে? আদৌ ওনাদের মনে পড়বে কি আমাদের কথা?... ওই ভালোলাগা, খারাপ লাগা, রাগ-অভিমান- ঝগড়া, হাসি-কান্না-ইয়ার্কি-ফাজলামি ভরা আমাদের ছোটবেলার দিনগুলোকে আমরা আর কোনদিন ও ফেরত পাবনা। মাঝে মাঝে মনে হয়, কেন বড় হলাম? বেশ তো ছিলাম .... খুব ইচ্ছে হয় ছুটে চলে যাই ওই খেলার মাঠে আর ওদের বলি "নেবে আমাকে তোমাদের দলে?”
কি জানি কি উত্তর দেবে ওরা...

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই