ছবি: সুনন্দ |
নয়। রাতারাতি কেউ এখানে ‘কিছুই নাই’ থেকে ‘ঐশ্বর্য রাই’ হয়ে যেতে পারে। দরকার শুধু একটু ভাগ্যের সহায়তা এবং সংবাদ মাধ্যমের প্রসন্ন দৃষ্টি। না, সেই ব্যক্তির নিজস্ব প্রতিভা, পরিশ্রম নিশ্চয় রয়েছে। কিন্তু ওই পূর্বোক্ত দুটি মশলা না হলে ভাই খাবার বিকোবে না।
অবশ্য প্রয়োজন চিন্তা ভাবনায় অভিনবত্ব, বিশেষতঃ যদি যৌন সুড়সুড়ি
দেওয়া
যায়, তাহলে তো আর কথাই নেই। সবাই গপগপিয়ে খাবে। উদাহরণ ভূরি
ভূরি। সেই মধু সাপরে-র গায়ে সাপ জড়িয়ে লজ্জা নিবারণ দিয়ে শুরু, অতঃপর নামী পুরুষ
মডেলের দাঁত দিয়ে মডেলকন্যার অন্তর্বাস ধরে টানাটানি, উন্নত বক্ষে কালো থাবা এঁকে
কোনো এক ‘সাহসী’ মেয়ের তামাম ভারতীয়ের গায়ে কাঁটা লাগানো, দেশ বিশ্বকাপ জয়ী হলে
উলঙ্গ হওয়ার প্রতিশ্রুতি অথবা ঘটা করে টেলিভিশনে স্বয়ম্বর করে বিবাহের পর
(reality show!) সেই ব্যক্তিকে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ছেড়ে দেশের এক নামী সাধুবাবা কে
‘HOT’ ঘোষণা করা। উফ্, সত্য সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!
এবারেও যিনি হইচই ফেলে দিয়েছেন তিনি এক নারী। পার্থক্য একটিই,
এ ক্ষেত্রে তিনি এদেশীয় নন, তিনি বিদেশিনী এবং তাকে আমরা একেবারেই চিনি না (অন্তত
এ দেশে পদার্পণের আগে তাকে ক'জন চিনতেন আমার সন্দেহ আছে)। উৎসাহ চতুর্গুণ হয়েছে কারণ
তিনি এসেছেন আমাদের সেই প্রতিবেশী দেশটি থেকে যাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক দেখে অহি-নকুলও
লজ্জা পাবে। দেশ-দুটি স্বাধীন হওয়া ইস্তক একে অন্যকে বাঁশ দিতে উদ্যত।
রাজনীতি, কূটনীতির গণ্ডী পেরিয়ে এই ‘সুমধুর’ সম্পর্কের ছায়া
খেলার মাঠেও পড়েছে সে আজ অনেককাল হলো। সেটা ১৯৯৯ সাল। মনে আছে একদিকে কার্গিল যুদ্ধ
চলছে, অন্যদিকে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে হেরেও দেশে ফিরে খেলোয়াড়েরা বীরের সম্মান
পেলেন কারণ তারা পাকিস্তানকে হারিয়ে দেশের 'মান' রেখেছিলেন। মনে পড়ে সেই সময় একটি
হিন্দি ছবিতে সানি দেওলের বজ্রনির্ঘোষ- "দুধ মাঙ্গোগে তো ক্ষীর দেঙ্গে......কাশ্মীর
মাঙ্গোগে তো চীর দেঙ্গে"। জ্বালাময়ী এই বাণী ভারতীয়দের যতটা না তাতিয়েছিলো
তার চেয়ে অনেক বেশি তেতে গিয়েছিলেন সানি নিজেই, সেটা তার পরবর্তী অসংখ্য সিনেমায়
একা হাতে নির্বিবাদে পাকিস্তানি সেনা/জঙ্গী নিধন দেখেই মালুম হয়। আসলে হিন্দুস্থান,
পাকিস্তান একই মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া সেই দুই ভাই যাদের পারস্পরিক কলহের শিকার
হয়েছে দু’দেশের অসংখ্য নিরপরাধ সাধারণ মানুষ যা আজ কারো অজানা নয়।
কিন্তু তবু সেই দেশের এক রমণী কে নিয়ে হঠাৎ এই হইচই কেন? কারণ
খুব পরিষ্কার। তিনি সেই দেশের নবনিযুক্ত বিদেশমন্ত্রী এবং তদুপরি ডাকসাইটে সুন্দরী।
তিনি হিনা রব্বানি খর। যার ঝিলের ন্যায় অতল আঁখি সন্দর্শনে তামাম ভারতীয় হঠাৎ ভুলে
গেছে তার কিছুদিন আগেই মুম্বই তে হওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ। তার রূপের ছটায়
মুগ্ধ কেউ বলছে “রাহুল গান্ধী এইবার কাশ্মীর দিলো বলে”......আবার কারো বক্তব্য.........“এইবার
প্রমাণিত পাকিস্তান terrorist দের দেশ। না হলে এমন sex bomb পেলো কোথা থেকে?” তার সঙ্গে কি আলোচনা হলো তাতে
কারো আগ্রহ নেই, সবার আগ্রহ শুধু তাঁকে ঘিরে। অবস্থা এমন যে Google India তে ‘Hi’ টাইপ করলে প্রথম
option দিচ্ছে Hina Rabbani, বোঝো ঠ্যালা।
সত্যিই তিনি সুন্দরী, নিঃসন্দেহে। কিন্তু আমি ভাবছিলাম অন্য
কথা। শুধু সুন্দরী বলেই কি সকলে নিজেদের এতদিনের লালিত ঘৃণা ভুলে গেলো, ভুলে গেলো ক্রমাগত
ওই দেশটি থেকে সংগঠিত যাবতীয় সন্ত্রাসবাদী হত্যালীলা......নাকি আমরা সত্যিই ক্লান্ত,
ক্লান্ত এই সম্পর্কের মাশুল নিজেদের জীবন দিয়ে চোকাতে চোকাতে, ক্লান্ত নিজেদের অসহায়তা
দেখতে দেখতে। তাই হয়তো একটু সুন্দর দেখেই চমকে উঠি, আশায় বুক বাঁধি, হয়তো এবার সবকিছু
সুন্দর হয়ে যাবে। হবে কি? কে জানে......আমরা তো stupid common man (A Wednesday)।