হতে পারতো – ১
সই...
এখন এই শেষ মুহূর্তে বড্ড তোর কথা মনে পড়ছে। তুই থাকলে বলতি’
– এটা কোন
কায়দাই নয় – তবু অন্য বিকল্প নেই আর। আছে কি? কাকে লিখছি, কেন লিখছি, কে পড়বে – ভাবতে বসিনি। আমারই তো মন, সেই মনের কথা। আর কিছু পরে, যখন মনটাই থাকবেনা, তখন আর এই প্রশ্নগুলো কোন
কায়দাই নয় – তবু অন্য বিকল্প নেই আর। আছে কি? কাকে লিখছি, কেন লিখছি, কে পড়বে – ভাবতে বসিনি। আমারই তো মন, সেই মনের কথা। আর কিছু পরে, যখন মনটাই থাকবেনা, তখন আর এই প্রশ্নগুলো কোন
অর্থ বহন করবে, বল্?
তোর আমার গোটা জীবনটা শুধু আমাদের। অবর্তমানেও কাউকে সেখানে
উঁকি দিতে দেবোনা। কিন্তু সবাইকে, এমনকি নিজেকেও একবার জোরে বলা উচিত আজকের এই সিদ্ধান্তের
কারণ। অনেকদিন আগে থেকেই জানতাম ধ্রুব সত্যটা
– ‘সব সফল ভালবাসায় ছেদ টানে মৃত্যু’। জানা আর বোঝা কি এক? বুঝিনি কিছু। তোর ঝুপ্ করে চলে যাওয়ার পর বুঝলাম। সে যে কি বিষম বোঝা হয়ে দাঁড়াল- একা আমিই জানি।
– ‘সব সফল ভালবাসায় ছেদ টানে মৃত্যু’। জানা আর বোঝা কি এক? বুঝিনি কিছু। তোর ঝুপ্ করে চলে যাওয়ার পর বুঝলাম। সে যে কি বিষম বোঝা হয়ে দাঁড়াল- একা আমিই জানি।
আমার মত কেউ কেউ কখনো কাউকে আপন করতে পারেনা। আপন ভাবে, কিন্তু
গভীরতম, কুৎসিততম মুখোশটা খোলা, যেটা হয়ত নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের সমান, সেটা আর শেষ অবধি
করে উঠতে পারেনা। একমাত্র তুইই জেনেছিলি আমার নিভৃত মনের আসল চেহারা- তাই তোকেই করেছিলাম
নিজের জগৎ, আলোকমুখী লতা- পাকে পাকে বেঁধেছিল তোকে।
যখন আমার চারদিকে প্রজাপতির মতো ঘুরে বেড়াতিস, বাবুইয়ের মতো
গোছাতিস আমাদের সংসার- এক আধবার তাকিয়ে শান্তিতে শুধু হেসেছি মাত্র। এখন? এত পরিষ্কার
করে তোর কথা আগে কখনো ভেবেছি কি? প্রতি মুহূর্তে মনে হয়- কেন তোর সব হাঁটা-চলা, হাসি-কান্না
রেকর্ড করে রাখিনি? কেন প্রতিটা আনন্দ-মুহূর্তের ছবি নেই আমার অ্যালবামে? আমার স্মৃতি
কেন এত স্বচ্ছ নয়- কই, তোর ঠোঁটর তিলটা তো তেমন করে পারিনা মনে করতে? মনের চোখের থেকেও
খারাপ অবস্থা এখন নিজের চোখ দু’টোর। ঝাপসা হয়ে আসছে। কিছু জলে, কিছু...
ছবির উৎস: লিঙ্ক |
প্রতিদিন এই দু’কূল ছাপানো কান্না নিয়ে আর পারছিনা রে-
মানুষের আনন্দকে এত ঈর্ষা আগে কখনো করিনি। ওইটেই না বেঁচে থাকার
উদ্দেশ্য? আনন্দ? একটি বিন্দু ক্ষমতাও আর নেই এই ধরণীর আনন্দ-ভাণ্ডার থেকে এক কণা তুলে
নেওয়ার। হৃদয় খুঁড়ে শুধু বেদনাই জাগে, আনন্দ নয়। না হ’লে, হয়তো আরও দু-দিন চোখ খুলে
রাখতে ইচ্ছে হ’তো।
কোন দ্বিধা রাখিনি এক চুমুকে গোটা গ্লাসটা শূন্য করতে। শুধু
একটা কিন্তু থেকে গেলো- তুই আজ অনেকদিন নেই এই পৃথিবীতে, তবু তুমুলভাবে বেঁচেছিলি এক
আধ-বুড়োর মনে- কেউ নাহয় দেখতে পেতোনা, তার মানে কি সত্য নয়?
কিন্তু আজ? হাত এখুনি অবশ হয়ে আসছে। আর বড়জোর দশ মিনিট। তারপর?
আমার সাথে মুছে যাবে তোর সব স্মৃতি? কেউ আর মনে রাখবে না, কত সুন্দর ছিলি তুই? এত এত
মায়া দিয়ে গড়া সংসারে একটা শিশুকেও তো আনতে পারিনি- সই...? আর যে হাত চলেনা... ভুল
করলাম তোর স্মৃতিকে নিজে হাতে মেরে ফেলে? সই...?
হতে পারতো – ২
আজ এই প্রথম ফুরসৎ পেলাম নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর। বছর কুড়ি
আগে একইরকম এক অনুষ্ঠানের জন্য যে বুক ঢিপঢিপ, তা এবার না থাকলেও, নিরাপত্তার অভাবটা
ঠিকই টের পাচ্ছি। এবার তার সাথে মিলেছে, যাকে বলে ‘performance anxiety’। এই রকম একটা
Monologue হঠাৎ করে তো লেখা যায় না, কারণ থাকে। আর কিছুই না, কোন জবাবদিহি করার নেই
আমার কারুর কাছে। তবু মনে হ’ল, যে চলে গেছে, আজ সে থাকলেও তো কিছু উত্তর দিতেই হতো
আমায়, তাই...
সই...
ছবির উৎস: লিঙ্ক |
তোমার সঙ্গে জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছি। ওঠা-পড়া, ভাল-মন্দ,
প্রেম-অভিমানের মধ্যে দিয়ে। রোমাঞ্চ, আনন্দ, থর-থর আবেগের মতো তীব্র, তীক্ষ্ণ ঝাঁঝালো
কথার টেনিসও কম খেলিনি আমরা। একে অন্যের থেকে নিজেদের অনে-এ-ক বেশী ভালবাসতাম সন্দেহ
নেই। হয়তো তাই শেষ অবধি দমবন্ধ হয়ে আসতো। ভালবাসা ঠিক কবে প্রয়োজন হয়ে গিয়েছিল, সই?
তোমার চলে যাওয়ার পর অসংখ্য মানুষের সান্ত্বনার মুখে দুঃখের অভিনয় শেষ করে, একা ঘরে
যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছি, তার সঙ্গে বেদনা তো কই একটুও ছিলনা!
অত্যুৎসাহী নেড়ার মতো আবার একই বেলতলায় যাওয়ার আগে তাই ভয়ের
চোরাস্রোত বয়ে যাচ্ছে ভিতরে। আগের বারের মত অনেকগুলো ভুল এবার সন্তর্পণে এড়িয়েছি। তোমার
ভাল লাগবে কিনা জানিনা, তবু বলছি, এই মেয়েটিকে সত্যিই পছন্দ আমার। পোড় খাওয়া জহুরীর
মতো বাজিয়ে নিয়েছি ওর জীবনের থেকে চাহিদাগুলো। যা কিছু আমাদের এক নয়, তা অন্তত স্বার্থবিরোধ
ঘটায় না। সুন্দরী, কম বয়স, আরো কম বয়সে বাবাকে হারানো, ফলে father figure হওয়ার পূর্ণ
সুযোগ আমার হাতে। আর ওই যে Anxiety গুলোর কথা বলছিলাম- যদ্দুর জানি, নাঃ, কোন অশরীরীর
সঙ্গে লড়তে হবেনা আমায়। কথাগুলো লিখতে বসে আজ সঠিক বুঝলাম- ঠিক কত সন্তর্পণে তোমার
ঠিক বিপরীত মেরুর সন্ধান করেছি আমি।
ছবির উৎস: লিঙ্ক |
সই... তবু ভয় হয়। ভয় হয়- প্রায় এক জীবন কাটানো এই নির্মোহ পুরুষকে
শান্তি দিতে পারবে ওই হাঁটুর বয়সী মেয়েটা? নির্মম থাপ্পড়ের মতো তুমি যখন তুলে ধরতে
আমার স্ব-বিরোধগুলো মুখের সামনে আয়নার মতো- যত ঘৃণাই করে থাকি তখন- সে জন্যেই কি আজ
এই উচ্চতায় বসে নেই আমি? নিস্তরঙ্গ জীবনে সেই ঝড়গুলোকেই miss করবো না তো? এত বছর ওই
আগুনে পুড়ে চুলগুলো পাকানোর পর আবার কি ভাল লাগবে যুবক-যুবতী খেলা?
আর বড়জোর দশ মিনিট। বাইরে আওয়াজ বেড়েই চলেছে। আর কিছু পরেই
একগাল হাসি আর মাথা জোড়া কলপ নিয়ে বেরবো
- নতুন বর! পা দুর্বল- সম্পূর্ণ আলাদা কারণে। বিরাট দ্বিধা
নিয়ে বেরোতে হবে। সই? ঠিক করছি তো? তোমায় কি ভুলতে পারবো? নাকি নিষ্ঠুর ভাবে বুঝবো
ঘৃণার ছলে আসলে তোমাকেই ভালবেসেছি চিরকাল- সই..., কি করবো তখন আমি?