রবিবার। জানলার ধারে বসে আছে ছেলেটা। পাশের বাড়ির
বাগানে জাম গাছটার
দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। ঠিক কি ভাবছে সেটা হয়ত গুছিয়ে বলতে পারবে না। হাতের ওপরে ইতিহাস বই- বার বার ঘড়ির দিকে চোখ চলে যাচ্ছে। যদিও এক মিনিট আগেই
দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। ঠিক কি ভাবছে সেটা হয়ত গুছিয়ে বলতে পারবে না। হাতের ওপরে ইতিহাস বই- বার বার ঘড়ির দিকে চোখ চলে যাচ্ছে। যদিও এক মিনিট আগেই
দেখল চারটে বাজতে পনেরো... উফ্! মিনিটের কাঁটাটার
গতর যেন নড়তেই চাইছে না। মা বলেছে চারটের আগে কোনমতেই খেলতে
যাওয়া চলবে না। আবার
আকবরের ছবিটার দিকে তাকাল- ইতিহাস বইটাতে- তার ওপরে পাশে নিচে কীসব হিজিবিজি লেখা, একটা লেখারও মানে
খুঁজে পাচ্ছে না। সোমবার ইতিহাস স্যার sure জিজ্ঞেস করবে।
মুখস্থ করতে হবে- চাদরের তলায় থেকেও একটা কনকনে উত্তরে হাওয়ার শিহরণ সে অনুভব করল।
বাইরে ঠাণ্ডা রোদ... চকচকে নরম ঠাণ্ডা রোদ...
“বড্ড বাজে এই দিনগুলো। এত টেনশন নিতে হয়।
এত চাপ। আর কতদিন এইসব বই ঘাঁটতে হবে কে জানে! কবে যে বড় হব- একটা চাকরি করব- তখন
কে পায় !” আকবরের সাম্রাজ্য থেকে আবার বেরিয়ে গেছে সে।
ক্রিং ক্রিং !! "দীপ..."
ওই তো এসে গেছে বাবলু আর কৌশিক।
"আসছি" ...ঘড়িতে চারটে বাজতে পাঁচ।
"মা......খেলতে যাচ্ছি"।
"তাড়াতাড়ি আসবি"...মা’র কড়া নির্দেশ।
"আচ্ছা,ঠিক আছে"-এক দৌড়ে গেটের বাইরে। রোদটা
যেন আরও চকচক করছে। ২২ ইঞ্চির Hercules সাইকেলটাতে ছুটতে
ছুটতেই উঠে পড়ল। মুঘল রাজ্যপাটকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে. সে ফ্যাত ফ্যাত সাঁই সাঁই
করে চলল মাঠের দিকে।
"আজ আমি টিঙ্কু’দার টিমে খেলব । পটাদের হারাতেই
হবে", নরম দাড়ির শক্ত চোয়ালে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
মোড়ের মাথায় শ্রাবণী দাঁড়িয়ে। সাইকেলটার দাপুটে গতি
যেন একটু চিড় খেলো...পেটের মধ্যেও হালকা গুড়গুড় করে উঠল...কিন্তু বুঝতে দিল না
বাবলুদের...তিন মিনিটের মধ্যেই মাঠে। সবাই প্রায় চলে এসেছে। টিম বানানো চলছে।
সাইকেলটা কোনোরকমে স্ট্যান্ড করিয়েই এক পায়ের চটি খুলে আরেক পায়েরটা হাফ খুলতে
খুলতে দে ছুট।
হঠাৎ সাইকেলটা পড়ে যাওয়ার ঝনঝন আওয়াজ !
চমকে গেলো...
'Shit!' কফির কাপটা পড়ে গেল। চার পাঁচ
টুকরো। "থাকগে- আমাকে তো আর পরিষ্কার করতে হবে না। হাউস কিপিং স্টাফরা আছে।
চাপ নেই।" এখানে সবার responsibility ভাগ করা আছে। কফির
মেশিনের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁচের দেওয়ালের মধ্যে দিয়ে বাইরের মাঠটা দেখছিলাম। সেই নরম
চকচকে রোদ, বাচ্চারা খেলছে- কেমন যেন হারিয়ে গেছিলাম,
গায়ে চাদর নেই, এটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর-
শুধু গলারটাই টা একটু loose করলাম। আজ বোধ হয় একটু tight
করে বেঁধে ফেলেছিলাম।
আমি একটা "কফি ব্রেক এনজয় করছিলাম"।
বাবলু , কৌশিকদের সাথে অনেকদিন দেখা হয় না। টিঙ্কুদা শুনেছিলাম খেলা ছেড়ে দিয়েছে
অনেকদিন। একটা চাকরির খোঁজে হায়দ্রাবাদে ছিল এক বছর।
“Hey, What's up buddy!” পেছন থেকে বন্ধুর
ডাক। "buddy"...মানে বন্ধু।
“Nothing much!”
"চল, টিম মিটিং আছে, ম্যানেজার
ডাকছে "
“কটা থেকে?”
“চারটে...”
মনে মনে ভাবলাম ঘড়ির কাঁটাটা আজকাল আর স্লো চলে না
বিকেলের দিকে...
"কি ভাবছ বলো?"
" ভাবছি আজ কার টিমে খেলব!" হালকা
হাসলাম।
আমার "buddy" কিছুই বুঝল না...
ওর মুখটা ঠিক আকবরের মত দেখাচ্ছে এখন...