Sunday, September 18, 2011

নামকরণের ইতিহাস -- হলুদ পাখি


কথা তো বলার জন্যই’-তে কিছু একটা লেখা দেওয়ার জন্যে মনটা  অনেকদিন থেকেই উসখুস  করছিল। কিন্তু ঐ যে, আমার আবার  খাতা ও কলমের  সম্মেলন হলেও  লেখারা সবসময় উপস্থিত
থাকেনা। তাই অনেক ভেবে-চিন্তে, মাথার গোটা কুড়ি চুল চিঁড়ে  ঠিক করলাম আমার এই  blog-নাম হলুদপাখির ইতিহাস কিছুটা বলার , থুড়ি লেখার চেষ্টা করা যাক। এখানকার সবাই বাংলা ব্যান্ডের  সাথে পরিচিত...তাই আমার এই নামের উৎস যে ক্যাকটাস ব্যান্ডের হলুদপাখিগানটা  সেই বিষয়ে কারুর  নিশ্চয়ই কোনো doubt  নেইআসলে প্রথম যখন  গানটা শুনি তখন পুরো মানেটা  বুঝে উঠতে পারিনি
বস্তুত সিধুদার প্রেমে পড়ে যাওয়ার ফলে গানটার, এবং তার সাথে হলুদপাখি শব্দটারও  প্রেমে পড়ে যাই। পরে কোন একটা অনুষ্ঠানে সিধুদা  গানটার মানে ব্যাখ্যা করে, বলে যে হারানো শৈশবকে উদ্দেশ্য করেই  ক্যাকটাসের এই গান। আমার অবশ্য তখনো শৈশব পেরোয়নি (সে অবশ্য এখনো পেরোয়নি!) তার কয়েক বছর পরে যখন মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে খানিকটা  বড়হয়ে গেলাম, তখনই  প্রথম এই গানটার মর্মার্থ বুঝতে পেরেছিলাম। সেই হলুদপাখিটা যে কতরকম ভাবে  আমার দৈনন্দিন জীবনের সাথে  জড়িয়ে আছে, আবার থেকেও পুরোপুরি নেইএই উপলব্ধিটা বড্ড কষ্ট দিয়েছিল।

স্কুলে টিফিন-টাইমে খাওয়াদাওয়া ভুলে গিয়ে সারা স্কুল দৌড়ে বেড়ানো চোরেরথেকে পালানোর জন্যেযদি সে ছুঁয়ে দেয় তাহলে  যে আমি আবার চোর হয়ে যাব! অদৃশ্য তালা চাবির ঘেরাটোপ, কুমিরের আসবার  জন্যে অপেক্ষা করে থাকাএক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে কত সহজে পেরিয়ে যাওয়া  নয় ঘরের বাধা! বাড়ি থেকে রোজ বিশেষ টাকাপয়সা পাওয়া যেতনা তখনপ্রথম দিকে রোজ পাঁচ টাকাও জুটত'না, আমার মনে আছে আমি একবার  টাকা চুরি করে ১ টাকার আলুকাবলি আর ১টাকার কাঠি আইসক্রিম খেয়েছিলাম, তাও বন্ধুদের সাথে ভাগ করে, আর তাতেই সব টাকা শেষ! বিকেলে বাড়ি ফিরে  আবার দৌড়ে খেলার মাঠ-সারাদিন দৌড়ঝাঁপ করবার পর  বাড়িতে এসে প্রথম  ঘুমটা দিতাম বইয়ের ভিতর মুখ গুঁজে, শুরু হত মায়ের বকা - কাল থেকে যদি খেলতে গিয়েছিস দেখিস কি করি!” ..বলা বাহুল্য শুনতাম না, পরেরদিনও একই কেস!
সেইসব সহজ সরল দিনগুলো  যে কতটা উজ্জ্বল ছিল  সেটা বারবার মনে করবার জন্যই আমার এই হলুদপাখি। টিভিতে রামায়ণ, মহাভারত, স্টোন-বয়, বিক্রম-বেতাল আর আমার প্রথম প্রেম  ব্যোমকেশ বক্সীর রাজিত কাপুরসব ছেড়ে আজ অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছি। সেই দিনগুলোয় ফিরে যাওয়ার সুযোগ আর নেই। জীবনের জটিল থেকে জটিলতর অঙ্ক কষতে কষতে সাধারণ দুই ঘরের যোগ-বিয়োগ আজ ভুলে গেছি। আর হয়তো অত সহজে সেগুলোর সমাধান করা যাবে না। তাও মনে মনে মাঝে মাঝে ফিরে যাই, ঐ একমাত্র আশ্রয়টার কাছেআমার ছোটবেলা , যেখানে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন ছিল না, হারজিতের তত্ত্ব মাথায় ঢুকত না, হিংসা করবার জন্য ছিল বন্ধুর অধিকারের সুন্দর রঙিন পেন্সিল-রাবার, অথবা রঙিন  মোড়কের সামান্য লজেন্স। ঐ সামান্য জিনিষগুলো যে কতটা অসামান্য সেটা আজ বুঝতে পারি। তাই এই হলুদপাখিনামটার মধ্যে দিয়ে সবসময় ফেলে আসা দিনগুলোর মিষ্টি গন্ধ পেতে চাই।
তাই আমার এই নাম।

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই