Wednesday, September 21, 2011

যাত্রা...পথে -- বুড়ো আংলা

ছবির উৎস: লিঙ্ক

মনে আছে আমায়? হ্যাঁ, আমি সেই জনগণেরই একজন, যাকে এই বিশাল মহানগরীর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে জীবিকা
নির্বাহের উদ্দেশ্যে দৈনন্দিন যাতায়াত করতে হয়। Yes, I am one of the ‘mango people’এই দৈনন্দিন যাত্রা প্রসঙ্গেই আজ এই লেখা।
প্রতিদিন অকুস্থলে পৌঁছানোর বিষম তাগিদে বহুপূর্বেই সুখনিদ্রার মায়া ত্যাগ করে ভোররাত্রিতেই আমাকে উঠতে হয়। না না, ভাববেন না আমাকে প্রতিদিন বিশেষ কোনো দৈহিক পরিশ্রমের কাজ করতে হয়। আমি তথাকথিত প্রযুক্তি-বিমুখ পশ্চিমবঙ্গ’-এর একটি
বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করি। কিন্তু প্লিজ আমার কথার মধ্যে কোনো রাজনৈতিক রঙ খুঁজতে বসবেন না। নিতান্ত
নিজের ইচ্ছেয় যে আমি প্রযুক্তির সাথে যুক্ত, তা নয়। কিছুটা মা-বাবার ইচ্ছে পূরণ আর কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা। যাকগে সে প্রসঙ্গ! আসলে কথা শুরু করলেই মনের লাইনগুলো এমন এলোমেলো হয়ে পড়ে যে আসল কথাটাই ভুলে যাই।
যাত্রাপথের শুরু সকালবেলায় সরকার প্রণোদিত কিছু নির্দিষ্ট বাসের line-এ দাঁড়ানো থেকে। সর্বাধিক জনঘনত্ব বিশিষ্ট এই রাজ্যের সেই সর্পিল line অতিক্রম করে যখন বাসে উঠলাম, অকুস্থলে যাওয়ার উদ্দেশ্যই আধাবিস্মৃতির পথে। যাই হোক, এবারই আসল পরীক্ষা। তিল ধারণের জায়গা না থাকা সেই বাসে নিজেকে টিকিয়ে রাখার অমানুষিক পরিশ্রম। উপরি পাওনা কিছু ছুটকো মন্তব্য, ‘দাদা, পা-টা মাড়িয়ে গেলেন যেঅথবা কি হচ্ছে দাদা, হাতটা সাবধানে’, ইত্যাদি। কর্মজীবনের প্রথম দিকে সত্যিই এইসব মন্তব্য শুনে একটু বিব্রতই হতাম। মনে হত ইস, সত্যিই একটু সাবধান হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু মাথার চুলের রং পরিবর্তনের সাথে সাথে বুঝতে পারছি উক্ত মন্তব্যগুলির সম্পূর্ণ দায় যে শুধুই আমার এমনটা নয়। কিছুটা হলেও দায়টা  গত কয়েক দশক ধরে রাজত্ব চালানো আমাদের মহামান্যসরকার-এরও। যাঁরা দৈনিক যাতায়াত করে থাকেন তাঁরা অবশ্য বুঝতে পেরে গেছেন যে আমি মহামান্য সরকার পরিচালিত মহানগরীর সড়কের কথাই বলছি। আমার প্রতিদিনের দীর্ঘ যাত্রাপথে বিভিন্ন ধরনের সড়কের সাথে আমার পরিচয় বেশ কিছুদিনেরই। কিন্তু ওদের সাথে আলাপ হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত সময়টা যেন থেমে আছে। আজ থেকে পাঁচ-দশ বছর আগে যে অবস্থায় ওরা ছিল, এখনো সেরকমই আছে, হয়তো আরো পাঁচ-দশ বছর ওরকমই থাকবে। না না, আমি ওদের হয়ে গলা ফাটাচ্ছি না, নিজের দুর্দশা বোঝানোরই চেষ্টা করছি। একে সকালবেলাতেই যুদ্ধ করে বাসে ওঠা, তারপর আবার বাসের মধ্যে মুহুর্মুহু নিজের সম্মান বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ, তারও ওপরে আবার রাস্তার এই দুরবস্থা। কখনো কখনো ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন হলে যদি বাসের জানালার ধারে বসার সুযোগ জুটে যায়, আজকাল

ছবির উৎস: লিঙ্ক


সত্যিই রাস্তাগুলোর দিকে তাকাতে ভয় লাগে। মনে হয় চাঁদের এক-একটা বড় বড় গহ্বরকেও রীতিমত টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে আমাদের মহানগরীর এইসব রাস্তা। বাসগুলো যখন এইসব রাস্তার অনির্বচনীয় দাঁতখিঁচুনি উপেক্ষা করে এগিয়ে যায়, তখন সত্যিই মনে হয়, ছোটবেলায় বড়দের কাছে শোনা গ্রামের রাস্তার উপর দিয়ে গরুর গাড়ি যাওয়ার ঘটনাও বোধহয় এর থেকে ভালো ছিল।
অবশ্য সবসময়ই যে রাস্তাগুলোর অবস্থা এরকম থাকে তা নয়। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে তো রাস্তাগুলো দেখে চেনাই যায় না এগুলো কি সত্যিই সেই একই রাস্তা! কিন্তু তারপর আবার যেই কে সেই। কখনো পুরসভার নেতৃত্বে জলের ‘pipe line’ বসানোর তাগিদে, কখনো বিদ্যুৎ দফতরের অতিরিক্ত কর্মতৎপরতায় কিংবা কখনো নিছকই রাস্তা মেরামত করা নামক মিথ্যে প্রহসনের জন্য আবার কিছুদিনের মধ্যেই রাস্তাগুলোর অবস্থা পুনর্মূষিকোভব। ইদানীং আবার শহরের কিছু বিশিষ্ট জায়গায় নগর সৌন্দর্যায়নের অজুহাতে পুরসভার ছোট্ট অভিব্যক্তি ‘To make a greater Kolkata... sorry for the inconvenience’অথচ একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে সেই সমস্ত এলাকাতেই রাস্তাগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। সেই সব অঞ্চলে না আছে কোনো নিয়মিত পরিবহন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, না আছে কোনো সেচ্ছাসেবক। সত্যি বলুন তো, সরকারের তরফে এই উদাসীনতা কি আমাদের প্রতিদিনের জীবনটাকে আরো বিপদসঙ্কুল করে তুলছে না?
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ক্রমবর্ধমান গতির দিকে লক্ষ্য রেখে, নিজেদের জীবনকে আরো একটু সুরক্ষার সাথে প্রতিপালন করার সৎ উদ্দেশ্যে আমরা কি সত্যিই আর একটু সোচ্চার হয়ে উঠতে পারি না?

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই