কথা কহিবার নিমিত্ত, সন্দেহ নাই। এই blog টিতে সকল শুভানুধ্যায়িগণ
স্বীয় মতামত ব্যক্ত করিতেছেন। কেহ কেহ আপনার রচনা প্রেরণ করিয়া blog-টিকে অধিকতর সমৃদ্ধ
করিতেছেন। ইহাতে একদিকে যেরূপ মনোভাবনা অপরের নিকট ব্যক্ত করা যাইতেছে, সেইরূপ অন্যদিকে মননশীল বাঙ্গালির চিন্তার এবং ভাবনার যথেষ্ট খোরাকি যোগাইতেছে, ইহাতে কোনোরূপ সন্দেহের অবকাশ নাই। কথা কহিবার (অথবা লিখিবার নিমিত্ত) বহু মাধ্যম বর্তমান। সুপ্রাচীন কাল হইতেই লিখনের নিমিত্ত লেখনী এবং ভূর্জপত্র ব্যবহার হইত। একবিংশ
করিতেছেন। ইহাতে একদিকে যেরূপ মনোভাবনা অপরের নিকট ব্যক্ত করা যাইতেছে, সেইরূপ অন্যদিকে মননশীল বাঙ্গালির চিন্তার এবং ভাবনার যথেষ্ট খোরাকি যোগাইতেছে, ইহাতে কোনোরূপ সন্দেহের অবকাশ নাই। কথা কহিবার (অথবা লিখিবার নিমিত্ত) বহু মাধ্যম বর্তমান। সুপ্রাচীন কাল হইতেই লিখনের নিমিত্ত লেখনী এবং ভূর্জপত্র ব্যবহার হইত। একবিংশ
শতাব্দীর কৈশোরে পদার্পণ করিয়া সে যুগের ভূর্জপত্রকে একান্তই
সেকেলে প্রতিপন্ন করা ন্যায়রহিত অথবা ন্যায়সম্মত কিনা সেই বিচার করিবার নিমিত্ত আমার
এই নিবন্ধের অবতরণা নহে। তবে, ইহা অনস্বীকার্য, যে ভূর্জপত্রই সর্বপ্রথম পুঁথি-গ্রন্থাদি
লিপিবদ্ধ করিবার কার্যে ব্যবহৃত হইয়াছিল। নচেৎ বহু বহুমূল্য রত্নধন কালের গর্ভে সমাহিত
হইয়া যাইত।
এক্ষণে, একটি বিষয় অবশ্যই উল্লেখ্য যে, মানুষ আপন কার্য সুষ্ঠুভাবে
সমাধা করিবার নিমিত্ত বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করিয়া থাকে। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানি অথবা
প্রযুক্তিবিদগণ তাঁহাদিগের গবেষণালব্ধ ফলাফল ব্যবহার করিয়া যন্ত্রাদি নির্মাণ করেন।
আবার তাঁহাদিগের উত্তরসূরিকূল তাঁহাদিগেরই গবেষণার উপর উত্তরোত্তর পরীক্ষানিরীক্ষা
করিয়া যন্ত্রের পুনরুন্নয়ন সাধন করেন। একই বিষয় লেখনী এবং কাগজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
কালের বিবর্তনের সহিত ইহাদিগেরও উৎকর্ষ সাধিত হইয়াছে। তাহারই ফলস্বরূপ চৈনিকগণের আবিষ্কার
কাগজ। তৎকালে লিখনের নিমিত্ত যে লেখনী ব্যবহৃত হইত তাহা প্রায় সমগ্র বিশ্বেই স্বল্পাধিক
প্রচলিত ছিল। পক্ষীর পালক হইতে প্রস্তুত হইত সেই লেখনী।
ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে Lewis Edson Waterman উদ্ভাবন করেন
একটি অভিনব লেখনী। ইহাকেই আমরা ঝর্ণা কলম বলিয়া অভিহিত করিয়া থাকি। ঝর্ণা কলম দীর্ঘকাল
যাবৎ বাঙ্গালির সঙ্গী তথা অলঙ্কার তথা মর্যাদার অভিজ্ঞানরূপে ভাস্বর। লেখক সুকুমার
রায়ের একটি কাহিনীতে আমরা ‘ফাউন্টেন পেন’-এর রসাত্মক বর্ণনা পাই। এমনকি হালের হুমায়ুন
আহমেদও ‘ফাউন্টেন পেন’ নামক একটি পুস্তক রচনা করিয়াছেন (যদ্যপি এযাবৎ তাহা আমার পঠিত
নহে)। একদা গৃহস্থ বাঙ্গালির গৃহে স্কুল-ফাইনাল অথবা মাধ্যমিক (যাহাই হউক না কেন) পরীক্ষার্থীর
উদ্দেশ্যে পুরষ্কার ঘোষণা হইত – পরীক্ষায় ‘স্টার মার্ক্স’ প্রাপ্ত হইলে একটি
‘Wingsung’ উপহার দেওয়া হইবে। সেই কাল বড় একটা পিছনে ফেলিয়াও আসি নাই আমরা। আমি স্বয়ং
এইরূপ পুরষ্কার পাইয়াছিলাম। অবশ্য তাহার শর্তাবলীও(!) কালের বিবর্তনের সহিত পরিবর্তিত
হইয়াছিল।
একালে দৈনন্দিন কাজকর্মের নিমিত্ত ঝর্ণা কলম আর বিশেষ ব্যবহৃত
হয়না। এমনকি তাহার স্থলে ‘Dot Pen’-এর ব্যবহারও আজিকে বিলুপ্তির পথে। লিখিবার সামগ্রী
আজিকে ‘Keyboard’। অস্বীকার করিব না Keyboard-এর উপযোগিতা। ইহাতে লেখার মধ্যে কোনোরূপ
ভুলত্রুটি ধরা পড়িলে তাহা সংশোধন করিয়া লওয়া সহজতর। হস্তলিপি দুষ্পাঠ্য হইলেও মুদ্রিত
লিপি সুখপাঠ্য। হস্তলিপির ন্যায় একটিমাত্র লিপি নহে- অগণিত লিপি বিদ্যমান যন্ত্রগণকে।
পরন্তু আশৈশব কলম সহযোগে লিখনের অভ্যাস। এযাবৎ যন্ত্রগণকের সম্মুখে বসিয়া হৃদয়ের কথা
(অর্থাৎ যে রূপে আপনারা পাঠ করিতেছেন) প্রস্ফুটিত হয়না। মার্জনা করিবেন, আমি এ বিষয়ে
অপারগ। বিস্তর প্রচেষ্টাতেও সাফল্য অর্জন করিতে পারি নাই। তবে, দরখাস্ত, বীক্ষণাগার-নিবন্ধ
ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করিবার কালে বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হইতে হয়না। তবে ভাবিয়া দেখুন,
যদি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় Keyboard-এ লেখা হইত, তাহা হইলে আমরা কি তাঁহার সুচিত্রিত(!)
পান্ডুলিপি দেখিয়া এইরূপে আনন্দ প্রকাশ করিতে পারিতাম? সত্য কথাই কহিব মহাশয়, আমার
হস্তাক্ষর দৃষ্টিনন্দন। সুতরাং আমি যে Keyboard-এ অঙ্গুলি সঞ্চালন অপেক্ষা কাগজের উপর
কলমের আঁচড় কাটিতে অধিকতর আনন্দলাভ করিব, তাহাতে বিচিত্র কিছু নাই। মনের ভাব যখনই কোনস্থলে
বন্দি করিবার বাসনা জাগে, কোন এক অজ্ঞাত কারণে ঝর্ণা কলমই তাহাতে যথার্থরূপে প্রাণদান
করিতে পারে।
‘Mani square’, ‘South city’ প্রভৃতি ‘Shopping Mall’ গুলিতে
গমনোত্তর যে সকল বিপনণ সামগ্রী আমার বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে, তাহার মধ্যে অন্যতম হইল
ঝর্ণা কলম। ‘Starmark’-এ যাইলে দেখা যায়- হালফিলের ‘Montex Handy’ যেরূপ শোভা বর্ধন
করিতেছে, সেইরূপ বাঙ্গালির চিরকালীন শখের ‘Wingsung’ও বর্তমান।‘Parker’-এর কথা তো সর্বজনবিদিত,
কিন্তু Pierre Cardin’ ভদ্রলোক ও কম যান না। তাঁহার একটি কথা আমার চমৎকার লাগে-‘Writing
is a pleasure.....’-বাস্তবিক। লিখন যে একটি শিল্প এবং অন্যান্য শিল্পের ন্যায় ইহার
নান্দনিকতা লইয়া চর্চা না হইলেও তাহাকে অস্বীকার করা কাহারও পক্ষে সম্ভব নহে। তবে কি
বলিব মহাশয়,‘Waterman’ অথবা ‘Mont Blanc’এর যে অপরূপ শোভা, তাহা অন্য কোনো কলমে অনুপলব্ধ।
প্রথম বার ‘Waterman’ নিরীক্ষণ করিয়া আমি স্থির করিয়া ফেলি যেরূপেই হউক, ক্রয় করিতেই
হইবে। অথচ তাহার মূল্য কয়েক সহস্র। অগত্যা, মনোবাসনা অবদমিত রাখিয়াছি চাকুরিলাভ অবধি।
আজিকালি ঝর্ণা কলম শুধুমাত্র লেখনী হিসাবেই নহে, একটি অলঙ্কার
হিসাবেও গণ্য হয়। পাঞ্জাবীর পকেট হইতে একটি ঝর্ণা কলমের বহিঃপ্রকাশ যে কিরূপ শোভাবর্ধন
করে, তাহা বলাই বাহুল্য। আমার কলমদানও Wingsung, Parker, Pierre Cardin এর ন্যায় বিভিন্ন
লেখনীর দ্বারা সজ্জিত। অস্বীকার করিব না যে অতিথিবর্গের এবং মিত্রদিগের আগমণ হইলে তাহা
তাঁহাদিগের দৃষ্টি যথোচিত আকর্ষণ করে। এবং তাঁহাদিগের আগ্রহ দেখিয়া আমি আত্মপ্রসাদ
লাভ করি।