ছবির উৎস: লিঙ্ক |
লিখতে আমি যে খুব একটা
পারদর্শী তা ঠিক নয়,
কিন্তু বেশ কিছুদিন জীবনযাত্রায় কিছুটা
ছন্দপতনের কারণেই লেখাটা লিখে ফেললাম। আমিও এই মহান জনগনতন্ত্রের আর পাঁচটা জনগণেরই একজন, হয়তো পঞ্চমজনই। না না, আলাদা করে চেনার জন্য বলছি না, Safe side-এ থাকার জন্য পেছনে থাকাটাই ভাল। আর পাঁচজনের মত পেটের ভাত জোগাড় করার জন্য
ছন্দপতনের কারণেই লেখাটা লিখে ফেললাম। আমিও এই মহান জনগনতন্ত্রের আর পাঁচটা জনগণেরই একজন, হয়তো পঞ্চমজনই। না না, আলাদা করে চেনার জন্য বলছি না, Safe side-এ থাকার জন্য পেছনে থাকাটাই ভাল। আর পাঁচজনের মত পেটের ভাত জোগাড় করার জন্য
ছবির উৎস: লিঙ্ক |
হয়ত পাঠকেরা ভাবছেন, কেন দাদা? আপনি সেগুলো
প্রয়োগ করেন না কখনো?
নাকি জানেন না যে ভারতীয় সংবিধান বলছে “Freedom of speech and expression is a natural right,
which a human being acquires on birth”।
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার
আগে আমি পাঠকদের একটু অবগত করতে চাই যে আমার মূল বক্তব্য শুধুমাত্র কথার শালীনতা
নিয়ে নয়, যে
চরম মানসিক অসহিষ্ণুতার দরুন এর বহিঃপ্রকাশ, তাকে নিয়েও। সংবিধানের কথাই যখন
আপনি বললেন তখন সংবিধানের হাজারটা ‘সঙ’-বিধান কপচানোর থেকে আমাদের নজরটা
সংবিধানের কারবারিদের দিকে একটু নিয়ে গেলে মন্দ হয় না।
মাঝে মধ্যেই মহানগরীর বাতাসে
কান পাতলেই শোনা যায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির পরস্পরকে করা আক্রমণাত্মক মন্তব্য
বাণ। কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাটা কি ভুলে গেলেন নাকি? সেই যে কোনো
এক রাজনৈতিক দলের নেতা আরেকটি দলের কোনও এক নেত্রীকে.........(অবশ্য জানি না এতে
রাজনৈতিক নেতাদের কোনো কূটচিন্তা কাজ করেছে কিনা!)। আরো একটা ক্ষুদ্র উদাহরণ। এই
তো আমাদের বিগত লোকসভা নির্বাচনের কিছুদিন আগের কথা। সর্বভারতীয় কোনো এক রাজনৈতিক
নেতা আর একজন সর্বভারতীয় কিন্তু জন্মসূত্রে বিদেশিনী এক নেত্রী ও তার সন্তানদের
যথাক্রমে ‘গাভী
ও সংকর-প্রজাতীয়’ বলে
সম্বোধন করে বসলেন। কি মনে হয়, এটা কি শুধুমাত্র তার রাজনৈতিক গদি হারানোর ভয় নাকি সেই
ব্যক্তির মানসিক বর্বরতার পরিচায়ক? অবশ্য সংবিধানের আওতায় থাকা সেই
নেতাকে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে মার্জনাপ্রার্থী হতে হয়েছিল।
মার্জনা বা পরিমার্জনার কথা
উঠলই যখন, বাস্তব
জীবন থেকে দেওয়া আরেকটি উদাহরণ হয়ত পাঠকদের দৃষ্টি বেশী আকর্ষণ করবে। ধরুন, আপনি কোনো
একটি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত,
যেখানে আপনাকে লেখা ঝাড়াই-বাছাই-এর কাজ করতে হয়। কোনো একদিন কোনো এক অনামী
লেখকের কোনো একটি লেখার গুণগত মান যথার্থরূপে যাচাই না করেই তাকে অপ্রাসঙ্গিক এক
তকমা এঁটে দেওয়াকে আপনি কি বলবেন? লেখাটা হয়তো আপনার পছন্দ নাই হতে
পারে, হয়তো
লেখাটির মূল বিষয় আপনি তৎক্ষণাৎ উপলব্ধি করতে নাও পারেন (যদিও আপনার অবস্থান
বিবেচনা করলে মানতে বাধ্য হতে হয় যে আপনি যথেষ্ট শিক্ষিত), সেটা আপনার
দোষ নয়। কিন্তু আপনার মত অবস্থানে থাকা কোনো এক শিক্ষিত মানুষের এই তাৎক্ষণিক
কুরুচিকর মন্তব্যকে কি বলা যায়- কথার অশালীনতা নাকি মানসিক অসহিষ্ণুতা? অথচ আপনি
নিজের একই মনের ভাব অনেক পরিমার্জিত ও পরিশীলিত ভাষায় উপস্থাপন করতে পারতেন।
ছবির উৎস: লিঙ্ক |
আপাতদৃষ্টিতে আপনার হয়তো মনে
হতে পারে যে আমাদের এই সমাজের বিভিন্ন কর্মস্থলে ‘Survival of the fittest’-থিয়োরি
অনুযায়ী বোধহয় কিছুটা রূঢ় হতেই হয়, কিন্তু সেই একই থিয়োরি তো বাকিদের
ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কাজেই এই আপাতরূঢ় মনোভাব কি আদৌ আমাদের কর্মপথকে সুগম করে
তোলে?
এবার আসি আপনাদের প্রশ্নে।
অস্বীকার করব না, আমি
জানি সংবিধান কি বলে আর জানা সত্ত্বেও হয়ত আমিও প্রয়োগ করি তথাকথিত কিছু অশালীন
শব্দ, কিন্তু
স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করে। কারণ সেই সংবিধানই (Grounds Of Restrictions: Decency or morality) আমাকে বলে “Sections 292 to 294 of the Indian Penal Code
provide instances of restrictions on the freedom of speech and expression in
the interest of decency or morality. These sections prohibit the sale or
distribution or exhibition of obscene words, etc. in public places”।
প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের
চারপাশে ঘটে যাওয়া এই ধরণের ছোটোখাটো কিন্তু দৃষ্টি আকর্ষক দৃষ্টান্ত কি আমাদের
মনে করিয়ে দেয় না যে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জীব হওয়া সত্ত্বেও আমরা ভুলে যাই ‘Man as rational being desires
to do many things, but in a civil society his desires have to be controlled,
regulated and reconciled with the exercise of similar desires by other
individuals’। কখনো কি আমাদের এটুকু মনে হয় না যে
এই মানসিক অসহিষ্ণুতার পথ ধরে মনুষ্যত্ব বিসর্জনের দিকে আরো একটু অগ্রসর হচ্ছি
আমরা ?