আবার চলে এয়েচি
দ্বিধান্বিত(ভক্ত) ওষ্ঠাধরে কিছু প্রাণের-মনের কথা প্রাণের ভয় না রেখে বলে ফেলবো
বলে। বিশেষ কাজ কোনদিনই ছিলনা। তাই এই শ্রাবণে, আষাঢ়ে নিবন্ধের সূত্রপাতে বেশি motivation
Carl Sagan এর Cosmos সিরিজটি বেশ লাগে আমার, অধিকাংশ না
বুঝেই। তার এক episode
এ ভদ্রলোক দেখালেন,
ক্ষুধা-তৃষ্ণা-যৌনতা-ঈর্ষা-চ্যালাগিরি –এই সব বোধের জন্ম মগজের ভিতরের এক
অংশে, যার
সঙ্গে সরীসৃপের মগজের দারুণ মিল, আর বিবর্তনের নিয়মে নাকি এই অংশের উৎপত্তি ওই ‘ঠাণ্ডা’ মাল গুলো
থেকেই। এর চারপাশ ঘিরে আছে যে মগজ, তা স্তন্যপায়ীদের সম্পত্তি, একেই আমরা
মস্তিষ্ক/হৃদয় বলে থাকি। বাকি সব নিয়ে কিছু বলার নেই, কিন্তু ওই ‘চ্যালাগিরি’ ব্যাপারটা
নিদারুণ আদিম জেনে আমার বড় আমোদ হল। কি imply করে এই তথ্য? অবশিষ্ট Basic Instinct গুলোর
মত তত গুরুত্ব পায়না কেন এই অনুভূতি?
এর প্রয়োজন
হয়নি। রামকৃষ্ণের ওই কালো মেঘে সাদা বক দেখার মত(আচ্ছা, কিছু মনে
করবেন না, হঠাৎ
মনে হল, অন্য
কোন বেয়াদব ছেলের ‘বক’ দেখানোয় ওই তুরীয়াবস্থা
প্রাপ্তি ঘটেনি তো?),
খবরের কাগজে কোন এক জনসভার একটা ছবি দেখে আমার গভীর ভাবোদয় হল। সে কথাই বলব-
গুছিয়ে বলার দায় কোনদিনই
ছিলনা, তবু
দেখা যাক।
কারণ অতি গভীর আর অবচেতনে
ঢাকা বলে আমার ধারণা। খাওন-দাওন-মিলনের পর আমার-আপনার কাজটা ঠিক কি বলুন তো? এমন কিছু, যা সময়
কাটায় আর আনন্দ দেয়। সমাজবদ্ধ জীব, তাই সাহচর্যের মত আনন্দ আর কিছুতে
নেই। আর কয়েকটি মাথা একত্র হলেই,(সে ঘরে বসে বা পাড়ার মোড়ে) আসে যে ক’টি মূল বিষয়, তার সব, স-অ-ব আসলে
নেতৃমুখী। দড়াম করে প্রথমে আসে- গুষ্টির পিণ্ডি রাজনীতি। কি আর বলব, by default, এর
নিয়ম- একটা ন্যাতা/কানি (পড়ুন নেতা/নেত্রী) থাকবে, আর রোমশ জনগড্ডল তার মুখবিকৃতিতে
আয়না ধরবে। দেশের ভাল করতে আণ্ণা হাজারে লোকপাল বিল আনলেন, তার বয়ান ক’টা লোক
পড়েছে, আর
ক’জন
ঠিক পাত্তা দেয়? কিন্তু
পালিশ করা imageটা
রাখতে সক্কলে vote দিচ্ছে
তার সপক্ষে। কি বললেন?
তা বলে কি দুর্নীতি মেনে নেব? সরকারের বড়দাসুলভ চোখ-রাঙানি মেনে নেব? কখনোই না, কিন্তু
দুর্নীতির প্রতিবিধানে ঠিক কি করতে চলেছি না জেনে, ‘এত্তো লোকে বলছে, ঠিকই হবে’ ভেবে সেটাকে
support করা, কেমন ‘ঠান্ডা’ রক্তের গন্ধ
পাচ্ছেন না- সরীসৃপের?
তা, সেই আবশ্যিক
বিষয়টিতে না হয় পরে আসা যাবে। আসি তার পরবর্তী বিষয়- ধর্মে। ব্যস, শব্দটা
শুনেই সাতদিনের পুরনো ইলিশের আঁশটে গন্ধ পেলেন, না? হুম্, এ বিষয় ঐচ্ছিক গণিতের থেকেও দুরূহ।
জাস্ট খেলা হিসেবে,
-আমি আপনাকে দশ মিনিট সময় দিচ্ছি- একটা ধর্ম দেখান তো আমায়, যেখানে ওই ideal definition মেনে
সব ব্যাটা নিজের নিজের মত চলছে, কোন হোতার পেছনে ফেউএর মতো ঘুরছেনা! দুম করে হিঁদু বলার আগে
ভাবুন, কার
কথায়, বলা
ভাল কাদের কথায় ভাল-মন্দ ধর্ম-চিন্তা শুরু করেছেন? কালীঘাটে আপনার পুজো দেয় পাণ্ডা, পার্ক-সার্কাসে
ভাল কথা বলে মৌলবী, মিষ্টি
হাসির ‘ফাদার’ ঠিক কি qualification-এ
যে আপনাকে জ্ঞান দেওয়ার অধিকার পেল কে জানে। পুজোটা ঠিক কবে আসছে জানেন? কোন ব্যাটা ‘বিশুদ্ধ
সিদ্ধান্ত’ মেনে
এক তিথি বলে, কে
আবার ‘fool’ পঞ্জিকা।
কলেজে কি পড়েছেন? দর্শন, বিজ্ঞান? পড়ে, ভেবে কোন দার্শনিকের
কথা, কোন
বিজ্ঞানীর কথা ভাল লাগলো,
ঠিক মনে হল-এই বুঝে নিজের ‘ধর্ম’ নির্ধারণ করেছেন? সেকি? করেননি? আপনি না
উচ্চশিক্ষিত?
ধরুন, প্রিয়জন
মারা গেলেন। কি করবেন?
“উনি চাইতেন-” বলে
কিছু করলে আর আপনাকে দোষ দিচ্ছে কে? বেশ, তবে আপনি কি চান? ‘Bridges of Madison County’ দেখার
সময় ফোঁস ফোঁস করে চোখের জল আপনিও ফেলেছেন, কিন্তু সুন্দর শেষ ইচ্ছেটার মত কখনো
কিছু চেয়েছেন কি? সে
নাহয় অতদূর ভাবা হয়নি,
আচ্ছা তবে বিয়ে?
সেই মধুর উৎসব শুধুই আপনার(নামে দু’জনের, আসলে সবার নিজের। হিঁদুরা বুদ্ধিমান, তাই দু’রকম
অনুষ্ঠান), তবু
আসলে ঠিক কিভাবে বিয়েটা করেছেন বলুন তো? নিজের মতে, নিজের
ইচ্ছেয়? একটা
বাঙালি ছেলে এখনো দেখিনি যে টোপরটি পরার জন্যে লালায়িত, কিন্তু আসল
সময়ে ঠিক সুড়সুড় করে বসবে গিয়ে পিঁড়িতে। ‘Compromise করা কি ভীষণ খারাপ’ বলে বলে গলা
আর আঙুল (মোবাইল সৌজন্যে) ব্যথা করে শেষে বৈবাহিক জীবনের শুভারম্ভ হল তাতেই।
ঢিচক্যাঁও!
কি বলতে কি বলে চলেছি তার নেই
ঠিক। ‘আবোল
তাবোল’ বইটা
নামেই ওর’ম, আসলে খুব
গুছিয়ে লেখা, সব
কবিতার আলাদা বিষয়। অমন গুছিয়ে লেখা সকলের কম্মো নয়, অসুস্থদের তো নয়ই। তবু বলতে বাধা
কোথায়?
বাঙলার বাইরে আজ পর্যন্ত
বেরোইনি, তাই
শুধু বাঙালিদেরই মুণ্ডপাত করা যাক। আরও বেশি করে, বাঙালি হিঁদুদের। বলুন দেখি, সামাজিক
উৎসবে, ব্যসনে
‘আরে, ধর্ম-টর্ম
নয়, উৎসবের
আনন্দ’ বলে
কোঁচা দোলানো বাঙালি ঠিক কি করে অন্দরে ধর্ম পালন করে? বিছানার
পাশে, আলাদা
ছোট ঘরে রাখা ঠাকুর-দেব্তার ফটো, আরও চাড্ডি আবর্জনা- এসব আজকাল হাল-ফ্যাশনের বাঙালি বাড়িতে
পাওয়া যায় না। তবে কি প্রাণে ভয় নেই? (যতই নিজেকে চোখ ঠারুন, ধর্ম পালনের
অন্য কোন কারণ নেই) বিলক্ষণ! সেই জন্যেই আছেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ, ঠাকুর
অনুকূলচন্দ্র, ঠাকুর
নিগমানন্দ, রাম
ঠাকুর(ক্ষেত্রবিশেষে ঠাকুর রবীন্দ্রনাথও বটেন!) –আরও এত, যে বটানির
ফার্স্ট গার্লও অত নাম মনে রাখতে পারবেনা। এনারা ধর্মপালন করবেন, আর আপনি
গিয়ে দীক্ষাটি নিয়ে এসে কাজের লোকের ওপর তড়পাবেন ‘‘...এই যে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা
খুঁজিছ ঈশ্বর!’’-আহা!
এই প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে পড়ে গেল- এক পরিচিতের কাছে শুনি, তিনি যে
ইশকুলে পড়ান, তার
স্টাফরুমে আলোচনা হচ্ছে,
“আরে জানোনা! দক্ষিণেশ্বরে মা সারদা কি জাগ্রত!” –দাঁড়াও দাঁড়াও, একটু কেশে
নিই, ‘জাগ্রত?’ সিরিয়াসলি? একটা বাচ্চা
মেয়েকে বিয়ে করে এনে একটা লোক সেই বিয়েটা consummate তো করলই না, উপরন্তু
তাকে পুজো-টুজো করে একসা করে তার ছোট মাথায় ঢোকাল যে সে আসলে ঈশ্বর, তার ‘ও’সবের কোন
প্রয়োজন নেই। সে সব বাদ দিন, গেরুয়ারা রাগ করবে, তবে মহিলার থাকার ঘরটা আমি দেখেছি, বিশ্বাস
করুন, ওখানে
কোন ‘পুরুষ’ তার বউকে
রাখতে পারেনা, ‘মহাপুরুষ’ তো দূরের
কথা।
তবু এই রকম সবক’টা লোকের
সবক’টা
কথা শুনতে বাকি রাখেন কি?
‘জলে-জঙ্গলে-অস্থানে-কুস্থানে-আঘাটায়-কুঘাটায়’ যেখানেই বিপদে পড়েন, বহুদিন মৃত
সিড়িঙ্গেপানা একটা লোককে স্মরণ করেন কি? কি বললেন? আপনি সরীসৃপ
হতে পারেন, কিন্তু
যাদের ‘চ্যালাগিরি’ করেন, তারা প্রকৃত
মানুষ, ওর’ম করেননা?
তবে যে লোকটার হাতের কাঠটির
কেরদানিতে আপনার তিনপুরুষ (কমিয়ে বললাম) জাস্ট হাঁ, সেই লোকটা যখন একটা pedophile, দুর্নীতিগ্রস্ত, ছেঁদো
ম্যাজিক দেখানো এমনকি খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত ‘বাবা’র (সাঁই বাবা) মৃত্যুর পর সেখানে
গিয়ে কেঁদে ভাসায়, তার
বেলা? তাতে
যখন উপযুক্ত সঙ্গত করেন প্রিয় বাঙালি অভিনেত্রী- নর্তকী, তখন সেটা আর
অত দূরের বিষয় থাকেনা কি বলেন?
আমি খেয়াল করে দেখেছি, এই বিশ্বাস
ব্যাপারটা অনেকটা ক্রনিক রোগের মত। আমার এক আত্মীয় আছেন, যতবার তাঁর
সঙ্গে দেখা হয়, একটা
করে নতুন ছবি বা মূর্তি দেখি তাঁর বসার ঘরে- কোন গুরু/গুরুমা। সবাই নাকি life-changing, আর
তার কোনটাই নাকি আমি বুঝবোনা। একবার সেখানে দক্ষিণ ভারতীয় ‘আম্মা’র (মাতা
অমৃতানন্দময়ী দেবী) এক ছবি দেখলাম, যা দেখে মনে পড়ল সদ্য টিভিতে দেখা ওই
মহিলার জোচ্চুরির গল্প। আবার এক ‘Faith Healer’, যুগে যুগে সারা পৃথিবীতে এদের ঝলক
দেখা গেছে। মুন্নাভাইয়ের ‘ঝাপ্পি’র আরও aggressive version।
এ-ক-ই গল্প জ্যোতিষের
আলো-আঁধারি জগতেও, এক
কথায় বলতে পারেন ঢপের কেত্তন। তা, আজ আর কথা বলতে ভাল লাগছেনা। পরে আবার সে গল্প অন্য কোনদিন
গাঁকগাঁক করে শুরু করবো,
কেমন?
(সম্পাদকের কাছে অনুরোধ, তিনি যদি
লেখার পরে সঙ্গে পাঠানো Link
গুলো প্রকাশ করেন,
তবে বক্তব্যের জোর বাড়ে। সাঁই বাবা সংক্রান্ত ভিডিও গুলি আসলে বিবিসির তৈরী
একটিই ভিডিওর অংশ। পরপর দেখবেন।)
বাবা:
আম্মা: