ছোটবেলায় একটা বাগ্ধারা শুনেছিলাম “চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা,
যদি না পড়ো ধরা”। কথাটার মাহাত্ম্য টের পেলাম এই মাস্টারির চাকরিতে
ঢুকে। কাকতালীয় ভাবে চাকরিজীবনের প্রথম দিন স্কুলে একটি পরীক্ষা চলছিল এবং ওই দিনই যখন একটি মেয়ের পরীক্ষা বাতিল করা হল সে টুকলি করছিলো বলে, আমি বুঝে নিলাম, যে এই সংক্রান্ত বহু ঘটনার সাক্ষী ভবিষ্যতেও হতে হবে। স্কুলে পড়াকালীন একবার একটা খুব খারাপ কাজ করেছিলাম। পরীক্ষা চলাকালীন, উঁচু ক্লাসের
একটি দিদি আমাদের পরীক্ষা হলে নকল করছিল। অনেকেই ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেও কেউ invigilator কে কিছু জানায়নি। ঘটনাটাকে চেপে যাওয়া ‘গর্হিত অপরাধ’ মনে করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে দিয়েছিলাম। এই কথাটা উল্লেখ করলাম এটা বোঝাতে, যে ছোটবেলা থেকেই পরীক্ষা হলে নকল করাটাকে আমি ঠিক নিতে পারিনা। তবে পরীক্ষা হলে একটু আধটু hall-collection ছাত্রীরা করলে তাতে কোন মাথাব্যথার কারণ আমার ঘটেনা। ‘নকলে’র যে রূপ আমি দেখেছি, তা নিয়ে লম্বা গল্প করা যায়। নিজেকে কোনদিন নকল করতে হয়নি, তাই আমি নকল করার পদ্ধতিগুলো সম্বন্ধে একেবারেই অজ্ঞ ছিলাম। প্রথম প্রথম পরীক্ষা হলে ডিউটি থাকলে আমি রিলিফ-এ বেরিয়ে যাওয়ার পর রিলিভার ওই হল থেকেই নকল ধরতেন। তখন কি যে লজ্জা লাগতো! বন্ধুদের কাছ থেকে তাদের ‘চোথা’ করার যে গল্প শুনেছিলাম, সেটাও কাজে লাগাতে পারতাম না। কিছু দিন পর থেকে invigilation এর সময় কাউকে কাউকে সন্দেহ হতো কিন্তু তাকে search করার সাহস হতো না-যদি কিছু না বেরোয় তার কাছ থেকে, তখন তার থেকে অপমানজনক তো আর কিছুই হবেনা! ক্রমে এই শিল্পে আমি দক্ষ হতে শুরু করলাম। চাহনি, body movement, লেখার গতি থেকে টার্গেট করা- আর তারপরেই খপ্ করে শিকার ধরা। এতে যে কি অসীম আনন্দ হয়, তা ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব। তবে নকল ধরে কাউকে expel আজ অবধি করিনি। শুধু ১০-১৫ মিনিট তার খাতাটা আটকে রেখে দিয়েছি, বা খাতা দেখে যেগুলো ‘চোথা’র সাথে হুবহু মিলে গেছে, সেগুলো কেটে দিয়েছি। দোষ খুব সামান্য হলে একটু বকা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি।
ঢুকে। কাকতালীয় ভাবে চাকরিজীবনের প্রথম দিন স্কুলে একটি পরীক্ষা চলছিল এবং ওই দিনই যখন একটি মেয়ের পরীক্ষা বাতিল করা হল সে টুকলি করছিলো বলে, আমি বুঝে নিলাম, যে এই সংক্রান্ত বহু ঘটনার সাক্ষী ভবিষ্যতেও হতে হবে। স্কুলে পড়াকালীন একবার একটা খুব খারাপ কাজ করেছিলাম। পরীক্ষা চলাকালীন, উঁচু ক্লাসের
একটি দিদি আমাদের পরীক্ষা হলে নকল করছিল। অনেকেই ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেও কেউ invigilator কে কিছু জানায়নি। ঘটনাটাকে চেপে যাওয়া ‘গর্হিত অপরাধ’ মনে করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে দিয়েছিলাম। এই কথাটা উল্লেখ করলাম এটা বোঝাতে, যে ছোটবেলা থেকেই পরীক্ষা হলে নকল করাটাকে আমি ঠিক নিতে পারিনা। তবে পরীক্ষা হলে একটু আধটু hall-collection ছাত্রীরা করলে তাতে কোন মাথাব্যথার কারণ আমার ঘটেনা। ‘নকলে’র যে রূপ আমি দেখেছি, তা নিয়ে লম্বা গল্প করা যায়। নিজেকে কোনদিন নকল করতে হয়নি, তাই আমি নকল করার পদ্ধতিগুলো সম্বন্ধে একেবারেই অজ্ঞ ছিলাম। প্রথম প্রথম পরীক্ষা হলে ডিউটি থাকলে আমি রিলিফ-এ বেরিয়ে যাওয়ার পর রিলিভার ওই হল থেকেই নকল ধরতেন। তখন কি যে লজ্জা লাগতো! বন্ধুদের কাছ থেকে তাদের ‘চোথা’ করার যে গল্প শুনেছিলাম, সেটাও কাজে লাগাতে পারতাম না। কিছু দিন পর থেকে invigilation এর সময় কাউকে কাউকে সন্দেহ হতো কিন্তু তাকে search করার সাহস হতো না-যদি কিছু না বেরোয় তার কাছ থেকে, তখন তার থেকে অপমানজনক তো আর কিছুই হবেনা! ক্রমে এই শিল্পে আমি দক্ষ হতে শুরু করলাম। চাহনি, body movement, লেখার গতি থেকে টার্গেট করা- আর তারপরেই খপ্ করে শিকার ধরা। এতে যে কি অসীম আনন্দ হয়, তা ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব। তবে নকল ধরে কাউকে expel আজ অবধি করিনি। শুধু ১০-১৫ মিনিট তার খাতাটা আটকে রেখে দিয়েছি, বা খাতা দেখে যেগুলো ‘চোথা’র সাথে হুবহু মিলে গেছে, সেগুলো কেটে দিয়েছি। দোষ খুব সামান্য হলে একটু বকা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি।
ছবির উৎস: লিঙ্ক |
কয়েকটি ঘটনা এমন, যেগুলো কোনদিন ভুলবোনা। তখনো নকল ধরায় পটু
হয়ে উঠিনি, একবার একটি মুক্ত বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার সিট পড়লো আমার স্কুলে। পরীক্ষা
হলে গিয়ে দেখি পরীক্ষার্থীরা আমার কাকু-কাকিমার বয়সি। তা দেখে প্রথমেই একটু ঘাবড়ে গেলাম।
লক্ষ্য করলাম, গরমের মধ্যেও ছেলেরা ফুলহাতা শার্ট এবং তার নিচে আর একটি করে হাফ-শার্ট
পরেছে। আর মেয়েরা প্রায় সকলেই শাড়ি পরেছে। কারুর কারুর আবার গায়ে চাদর। পরীক্ষা শুরু
হলো এবং পরীক্ষার্থীদের জামাকাপড়ের বিভিন্ন অংশ থেকে মাইক্রো-জেরক্স বেরোতে শুরু করল।
যেগুলো ধরতে পারলাম ধরলাম, কিন্তু বেশীরভাগই পারলাম না। এক ভদ্রমহিলার দেহের দু’-একটি
বিশেষ জায়গা তার সামগ্রিক চেহারার তুলনায় ফোলা মনে হল। অনেক ইতস্তত করেও শেষ পর্যন্ত
সেখান থেকে গাদাখানেক ‘আসল’ বের করলাম। পরীক্ষা শেষ হল। পরীক্ষার্থীদের কথা শুনে বুঝলাম
এত কড়া গার্ড ওরা expect করেনি। পরিষ্কার শুনতে পেলাম একজন বললো, “বাইরে বেরোক দেখে
নেবো।” আমার কপাল ভাল যে বিশেষ কিছু দেখে নিতে তারা আর আগ্রহ দেখায়নি। পরে শুনেছিলাম
মুক্ত বিদ্যালয়ের পরীক্ষার ডিউটি নাকি এত কড়া করে দিতে নেই। তাই ওই পরীক্ষায় আর একবারও
ডিউটি দিইনি।
আমার আগের স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকে ছেলেদের স্কুলের সিট আমাদের
গার্লস স্কুলেও পড়ত। গ্রামাঞ্চলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা বয়স-আন্দাজে পরিণত এবং
অনেকে বয়েসের তুলনায় বড়। এরকম কিছু ছেলে আমার হলে থাকলে হতো মহাবিপদ। হলে ঢোকামাত্র
একটা সম্মিলিত চিৎকার কানে আসত। সেটা আনন্দে, দুঃখে না উত্তেজনায় তা বলা মুস্কিল। কারোর
কারোর চোখমুখে ছ্যাব্লামির ভাব স্পষ্ট। তা এদের মধ্যে কেউ নকল করছে সন্দেহ হলে আমি
স্কুলের বড় কাউকে ডেকে পাঠাতাম।
স্কুলের সাধারণ ইউনিট টেস্ট, ষাণ্মাসিক বা বার্ষিক পরীক্ষায়
নকল নিয়ে কম অভিজ্ঞতা হয়নি। কেউ লিখে আনে জামায়, কেউ স্কেলে বা পেন্সিল বক্সে; বেঞ্চগুলো
তো রামায়ণ মহাভারতের মতো সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে পরীক্ষার সময়। কেউ বইয়ের পাতা ছিঁড়ে আনে, আবার
কেউ আস্ত বইও নিয়ে আসে। ধরা কেউ কেউ পড়ে, সবাই নয়। তারা তাদের টিচারদের থেকেও দক্ষ
এই শিল্পে।
ছবির উৎস: লিঙ্ক |
নকল ধরা সব টিচারের কম্মো নয়। কোন কোন শিক্ষক শিক্ষিকা আছেন
তাঁরা পরীক্ষার হলে ঢুকলে সেখানকার আনন্দের হিল্লোল স্টাফরুমেও শোনা যায়, আবার কোন
কোন শিক্ষক-শিক্ষিকা হলে ঢুকলে একটা সম্মিলিত চাপা আর্তনাদ শোনা যায়। আমি যদি নিজেকে
rank দিই, তবে নকল ধরায় নিজেকে ১০০ তে ৪০ দেবো। এর কারণ পরীক্ষার পর যে ঘরে ডিউটি দিয়েছি,
সে ঘরে ফিরে এসে অনেক ‘চোথা’ আবিষ্কার করি, যেগুলো গার্ড দেওয়ার সময় ধরতে পারিনি। সব
স্কুলেই দু’একজন টিচার থাকেন যাঁরা ‘নকল’ ধরায় রাঘব-বোয়াল। কার কাছে যেন একবার শুনেছিলাম,
যারা নিজেরা নিজেদের ছাত্র জীবনে নকল করেছে, তারাই ভাল নকল ধরতে পারে। সত্যিই কি তাই?
কে জানে...